বন্য প্রাণীর জন্য বন্দিশালা নয়, প্রকৃতিই হোক তাদের আশ্রয়
গারো পাহাড় ঘেঁষা গজনী অবকাশকেন্দ্রের মিনি চিড়িয়াখানায় বন অধিদপ্তরের এক অভিযানে জব্দ করা হয়েছে সাতটি প্রজাতির ১৭টি দেশীয় বন্য প্রাণী। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত চলে এই অভিযান, যা পরিচালনা করেন বন্য প্রাণী অপরাধ দমন টিমের পরিদর্শক নার্গিস সুলতানা। গজনী অবকাশে ১৭ বন্য প্রাণী জব্দ
অভিযানে পাওয়া গেছে যে প্রাণীগুলো লাইসেন্স ছাড়াই খাঁচায় বন্দি ছিল—এদের মধ্যে ছিল একটি অজগর, চারটি বনবিড়াল, একটি গন্ধগোকুল, একটি শিয়াল, একটি বাজপাখি, পাঁচটি বানর ও চারটি হরিণ।
দীর্ঘদিন ধরে প্রাণীদের আটকে রাখা হয়েছিল খাঁচায়
স্থানীয় ইজারাদার ফরিদ আহমেদের মাধ্যমে পরিচালিত এই মিনি চিড়িয়াখানা ২০১৬ সালে গড়ে তোলা হয় পর্যটকদের বিনোদনের উদ্দেশ্যে। প্রতিটি প্রবেশ টিকিটের মূল্য ২০ টাকা। তবে চিড়িয়াখানার পশুদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত করুণ।
অভিযানকালে দেখা যায়, বন্দি প্রাণীগুলোর অনেকেই অসুস্থ ও অবসন্ন অবস্থায় ছিল। বিশেষত বনবিড়াল ও অজগরটি প্রায় নড়াচড়াহীন হয়ে পড়ে।
বন বিভাগের বার্তা: আইন লঙ্ঘনের ছাড় নেই
বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, দেশীয় বন্য প্রাণীকে আবদ্ধ করে রাখা, প্রদর্শন বা পরিবহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বন পরিদর্শক নার্গিস সুলতানা বলেন,
“গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে এসব প্রাণী জব্দ করা হয়। এই ধরনের অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে।”
অভিযানের পর শিয়াল ও বানরগুলো গারো পাহাড়ের বনে অবমুক্ত করা হয়। হরিণগুলো ইজারাদারের জিম্মায় রাখা হয়েছে এবং বাকি প্রাণীগুলো বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সুস্থ হলে তাদেরও প্রকৃতিতে ফেরত পাঠানো হবে। গজনী অবকাশে ১৭ বন্য প্রাণী জব্দ
প্রশাসনের সাড়া
জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন,
“বন বিভাগের তথ্য পাওয়ার পর আমি অভিযানের অনুমতি দিই। অবৈধভাবে প্রাণী রাখার দায় প্রশাসন নেবে না।”
চিড়িয়াখানার ইজারাদার ফরিদ আহমেদও অভিযানে কোনো আপত্তি না জানিয়ে বলেন, বন বিভাগের নির্দেশনায় তিনি চলতে প্রস্তুত।
মানবিক ও পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ
বন্য প্রাণী প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। তারা আমাদের জীববৈচিত্র্যের রক্ষাকবচ। চিড়িয়াখানায় অবৈধভাবে বন্দি করে রাখার মাধ্যমে শুধু তাদের স্বাভাবিক জীবন নয়, আমাদের পরিবেশের ভারসাম্যও হুমকির মুখে পড়ে।
পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের এই সংকটকালে প্রাণীদের জন্য প্রকৃতি হতে পারে একমাত্র আশ্রয়। আমাদের দায়িত্ব, তাদের সেই অধিকার নিশ্চিত করা।
শেষ কথা
গজনী অবকাশের এই ঘটনা কেবল একটি অভিযান নয়—এটি একটি বার্তা। প্রকৃতিকে ভালোবেসে, তার প্রতিটি প্রাণীকে মুক্ত রাখাই আমাদের ভবিষ্যতের পথ।
Call to Action:
আপনি কী মনে করেন—বন্য প্রাণীদের বন্দি না রেখে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া উচিত নয় কি?
আপনার মতামত কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না!
আরও এমন প্রতিবেদন পেতে আমাদের ফলো করুন বা সাবস্ক্রাইব করুন।