প্রকৃতি রক্ষায় প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ
সিলেটের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর এলাকায় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের ঘটনা নতুন কিছু নয়। তবে এবার প্রশাসনের শক্তিশালী পদক্ষেপ সবাইকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে। আজ শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টানা সাত ঘণ্টার অভিযানে, ৯ জন পাথর লুটকারীকে আটক করে তাৎক্ষণিকভাবে দুই বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ পদক্ষেপ শুধু স্থানীয় সম্পদ রক্ষার নয়, পরিবেশ সংরক্ষণের দিক থেকেও একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। সাদাপাথরে টাস্কফোর্স অভিযান
কীভাবে অভিযান চালানো হলো?
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর, কালাইরাগ এবং বাঙ্কার এলাকায় অভিযান পরিচালিত হয়। সকাল ছয়টা থেকে দুপুর একটার মধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের নেতৃত্বে পরিচালিত টাস্কফোর্স অভিযানে অংশ নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার।
অভিযানে উপস্থিত প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে, অভিযান চলাকালে সংঘবদ্ধভাবে তিন দিক থেকে পাথর ছুঁড়ে আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করে পাথর উত্তোলনকারীরা। তবে পুলিশ ও বিজিবির দ্রুত পদক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। সাদাপাথরে টাস্কফোর্স অভিযান
আটক ও দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা কারা?
অভিযান শেষে ১০ জনকে আটক করা হয়। এর মধ্যে ৯ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপর একজন আটককৃতের বয়স ১৮ বছরের কম হওয়ায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে তার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন:
- মোহাম্মদ আলীম উদ্দিন (দলইরগাঁও, কোম্পানীগঞ্জ)
- মকবুল হোসেন (নতুন মেঘারগাঁও)
- মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন (দক্ষিণ কলাবাড়ি)
- ফুল মিয়া (কালাইরাগ)
- ইকবাল মাহমুদ ও মোহাম্মদ কিবরিয়া আহমেদ (লাকি গ্রাম, গোয়াইনঘাট)
- জাহাঙ্গীর আলম ও আলী নূর (বাসাকর, দিরাই, সুনামগঞ্জ)
- মোহাম্মদ জজ মিয়া (কাশেমপুর, ইটনা, কিশোরগঞ্জ)
অভিযানে আরও কী কী জব্দ করা হয়েছে?
- ২০টি পাথরবাহী নৌকা ধ্বংস করে পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে
- আরও ১৮টি নৌকা জব্দ করে বিজিবির জিম্মায় রাখা হয়েছে
- অনেক পাথর উত্তোলনের যন্ত্রপাতি ধ্বংস বা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে
এ অভিযান স্পষ্টভাবে বোঝায়, প্রশাসন আর অবৈধ কর্মকাণ্ডের প্রতি কোনো সহনশীলতা দেখাবে না।
পরিবেশ ও পর্যটনের ওপর প্রভাব
সাদাপাথর, কালাইরাগের মতো পর্যটনকেন্দ্রগুলোর সৌন্দর্য কেবল পাথর বা নদী দিয়ে তৈরি হয়নি — এটি একটি জীবন্ত প্রতিবেশ। সেখানে অবৈধ পাথর উত্তোলন মানে নদীর প্রবাহ নষ্ট হওয়া, জলের স্বাভাবিক গতি বাধাগ্রস্ত হওয়া, মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর জীবন সংকটে পড়া।
এছাড়া পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তা হুমকির কারণও হতে পারে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধরে রাখতে এ ধরনের অভিযান এবং কঠোর ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি।
ইউএনওর বক্তব্য
কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও আজিজুন্নাহার স্পষ্টভাবে বলেন,
“পাথর লুটপাটের খবর পেয়ে আমরা টাস্কফোর্সের মাধ্যমে অভিযান চালিয়েছি। ১০ জনকে আটক করেছি, যার মধ্যে ৯ জনকে ২ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাথর লুট বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
শেষ কথা
সিলেটে পর্যটনকেন্দ্রে পাথর লুটের সময় ৯ জনকে দুই বছর করে কারাদণ্ডের ঘটনাটি একটি স্পষ্ট বার্তা দেয় — পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে প্রশাসন এখন আরও কঠোর। পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষায় আমাদেরও সচেতন ভূমিকা রাখা জরুরি। একসঙ্গে কাজ করলেই আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ বাঁচবে, এবং আগামী প্রজন্মের জন্য সুরক্ষিত থাকবে।
👉 আপনার মতামত কী? আপনি কি মনে করেন এমন অভিযান আরও বাড়ানো উচিত? মন্তব্যে জানাতে ভুলবেন না!
📢 পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আমাদের সাথেই থাকুন।
#সিলেটে_পর্যটনকেন্দ্রে_পাথর_লুটের_সময়_৯জনকে_কারাদণ্ড #পরিবেশ #জলবায়ু #প্রকৃতি_রক্ষা #সিলেট #ভোলাগঞ্জ #টাস্কফোর্স_অভিযান