জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল রেলগেট সংলগ্ন একটি ইটভাটার গরম ধোঁয়া বোরো ধানখেতের ওপর প্রভাব ফেলেছে, যার ফলে ১২০ বিঘা জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা এই বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে আজ রোববার জয়পুরহাট-পাঁচবিবি সড়কে সড়ক অবরোধ করেছেন। কৃষকদের দাবি, তারা ক্ষতিপূরণ চান এবং ইটভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। জয়পুরহাটে সড়ক অবরোধ
ঘটনার বিবরণ
২৫ এপ্রিল পুরানাপৈল রেলগেটের কাছে অবস্থিত আরএনবি নামের একটি ইটভাটার ধোঁয়া ধানখেতের উপর পড়ে, যার ফলে একে একে মাঠের বোরো ধানখেত ধূসর রং ধারণ করতে থাকে। গরম ধোঁয়ার প্রভাবে ধানগুলো দ্রুত পুড়ে যায়। এর পর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা সড়ক অবরোধের মাধ্যমে তাদের ক্ষতির দাবির প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। প্রায় আধা ঘণ্টা এই সড়ক বন্ধ ছিল, যার ফলে যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণভাবে থেমে যায়।
কৃষকদের প্রতিবাদ
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা জানান, ইটভাটার ধোঁয়ায় তাদের প্রায় ২৫ একর জমির বোরো ধান এবং এক একর কলার বাগান নষ্ট হয়েছে। তারা ক্ষতিপূরণের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে। তাদের অভিযোগ, ইটভাটার মালিক এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তারা বাধ্য হয়ে এ পদক্ষেপ নিয়েছেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আরমান আলী জানান, কৃষকেরা লিখিতভাবে তাদের ক্ষতির কথা জানিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। জয়পুরহাটে সড়ক অবরোধ
সরকারি পদক্ষেপ
এ ঘটনায় ইউএনও, পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করার পর ইউএনও আশ্বাস দেন যে, ক্ষতিপূরণের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া, এ বিষয়ে তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ইটভাটা মালিকের প্রতিক্রিয়া
ইটভাটার মালিক বেলায়েত হোসেন জানিয়েছেন, তিনি শোনেছেন যে তার ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে ধানখেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে, তিনি এ বিষয়ে কোনো ক্ষতিপূরণের সিদ্ধান্ত নেননি, কারণ বিষয়টি তার পক্ষ থেকে সরাসরি ঘটেছে বলে তিনি মনে করেন না।
পরিবেশগত প্রভাব
এই ঘটনায়, বিশেষত ইটভাটার গরম ধোঁয়ার প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন, এই ধরনের বিষাক্ত ধোঁয়া পরিবেশ এবং মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ধানখেতের ক্ষতির পাশাপাশি, এই ধোঁয়া নিকটবর্তী এলাকার মানুষের শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদীভাবে পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
আলোচনা ও সমাধান
এই ধরনের পরিবেশগত সমস্যা রোধে আইনি এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইটভাটার ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর নিয়ম এবং পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রক্রিয়া চালু করা উচিত, যা কৃষক এবং স্থানীয় জনগণের ক্ষতি রোধ করবে। সরকার এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের যৌথ পদক্ষেপে পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব।
শেষ কথা
এ ঘটনায় সড়ক অবরোধ এবং কৃষকদের ক্ষতির দাবি সরকারের জন্য একটি গুরুতর সংকেত। এই ধরনের ঘটনা পরিবেশ সুরক্ষা এবং কৃষকদের স্বার্থরক্ষায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা প্রমাণ করে। এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত, যাতে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের পূর্ণ মূল্য পেতে পারেন এবং পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
মতামত জানাতে ভুলবেন না!
এ বিষয়ে আপনার কী মতামত? আপনি কীভাবে মনে করেন যে ইটভাটাগুলির পরিবেশগত প্রভাব হ্রাস করা সম্ভব? মন্তব্যে আপনার চিন্তা শেয়ার করুন!
#জয়পুরহাট #পরিবেশ_রক্ষা #ইটভাটা #কৃষক #জলবায়ু #পরিবেশ #ধোঁয়া #প্রতিবাদ