26.8 C
Bangladesh
সোমবার, জুন ২৩, ২০২৫
spot_img

নদীর ওপর পাল্টাপাল্টি বাঁধ: জামালপুরে পরিবেশ বিপর্যয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি

জামালপুরের বকশীগঞ্জ ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় দশানী নদীতে ভাঙন ঠেকাতে স্থানীয় বাসিন্দারা পাল্টাপাল্টি বাঁধ নির্মাণ করেছেন। পরিবেশ ও জলবায়ুর ওপর এর প্রভাব নিয়ে দেখা দিয়েছে নতুন উদ্বেগ। চলুন সংকটের পেছনের গল্প, বর্তমান অবস্থা এবং সম্ভাব্য সমাধানের দিকে একবার নজর দেওয়া যাক। নদীর ওপর পাল্টাপাল্টি বাঁধ

নদীভাঙন থেকে আত্মরক্ষার লড়াই

দশানী নদী পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের একটি শাখা, যা জামালপুরের বকশীগঞ্জ ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এই অঞ্চলে নদীভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বহু বাসিন্দা তাদের বসতভিটা ও ফসলি জমি হারান।

দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায়, স্থানীয়রা নিজেরাই নদীতে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। প্রথমে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার একটি এলাকার বাসিন্দারা নদীর ওপর আড়াআড়িভাবে বাঁধ তৈরি করেন। ফলে নদীর পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নসহ আশপাশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করে। ক্ষিপ্ত হয়ে বকশীগঞ্জের চর আইরমারী এলাকার মানুষ পাল্টা বাঁধ নির্মাণ করে। নদীর ওপর পাল্টাপাল্টি বাঁধ

পাল্টাপাল্টি বাঁধের ফলাফল: পরিবেশ ও মানুষের জীবনযাত্রায় প্রভাব

দুটি বাঁধের কারণে দশানী নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে নিম্নাঞ্চলের অসংখ্য ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে এবং বর্ষা আসার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতির আশঙ্কা আরও বাড়ছে।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, একপক্ষের নির্মিত বাঁধের কারণে প্রায় ৩২টি গ্রামের ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। শুধু জমিই নয়, ঘরবাড়ি, স্কুল ও অন্যান্য অবকাঠামোও হুমকির মুখে রয়েছে।

অন্যদিকে, যারা প্রথম বাঁধ নির্মাণ করেছেন, তাদের দাবি, নদীভাঙনে বহু ঘরবাড়ি ও জমি বিলীন হয়ে গেছে। তাই নিজেরা উদ্যোগী হয়ে নিজেদের অর্থায়নে বাঁধ নির্মাণ করেছেন, যাতে বর্ষায় গ্রামের মানুষ ও কৃষিজমি কিছুটা হলেও রক্ষা পায়।

এই পাল্টাপাল্টি বাঁধের প্রভাবে নদীর পরিবেশ, জলপ্রবাহ এবং আশপাশের এলাকার জলবায়ু পরিস্থিতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা

পাল্টাপাল্টি বাঁধ নির্মাণের খবর পেয়ে প্রশাসন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। জেলা প্রশাসন, দুই উপজেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিয়েছে।

দুই পক্ষের সাথে আলোচনায়, উভয় পক্ষ বাঁধ অপসারণে সম্মত হয়েছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, যদি স্বেচ্ছায় বাঁধ না সরানো হয়, তবে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নদীতে পানিপ্রবাহ রোধ করে বাঁধ নির্মাণের কোনো বৈধতা নেই। নদীভাঙন রোধে টেকসই ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে।

জামালপুরে নদীভাঙন: দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের প্রয়োজন

জামালপুরে ভাঙন ঠেকাতে নদীতে পাল্টাপাল্টি বাঁধ নির্মাণের ঘটনা দেখায় যে, সাধারণ মানুষ নিজেরাই জীবন ও জীবিকা রক্ষার লড়াইয়ে নেমেছে। তবে, এভাবে নদীর স্বাভাবিক গতি রোধ করা পরিবেশ ও জলবায়ুর জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য প্রয়োজন:

  1. টেকসই নদী ব্যবস্থাপনা: নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ অক্ষুণ্ন রেখে বাঁধ ও প্রতিরক্ষা অবকাঠামো নির্মাণ।
  2. স্থানীয় জনসম্পৃক্ততা: স্থানীয় বাসিন্দাদের মতামত ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে পরিকল্পনা গ্রহণ।
  3. প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান: নদীতীর সংরক্ষণ, বৃক্ষরোপণ ও খননের মাধ্যমে টেকসই পদ্ধতিতে ভাঙনরোধ।
  4. জলবায়ু ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: আগাম পূর্বাভাস ও প্রস্তুতি গ্রহণের মাধ্যমে বর্ষাকালীন সুরক্ষা।

শেষ কথা

জামালপুরের দশানী নদীতে পাল্টাপাল্টি বাঁধ নির্মাণের ঘটনা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং পরিবেশ সমস্যার প্রতিরোধে সময়মতো উদ্যোগ নেওয়া কতটা জরুরি। সবার সম্মিলিত চেষ্টায় এবং পরিবেশ সচেতন নীতিমালার মাধ্যমে টেকসই সমাধান গড়ে তোলা সম্ভব।

নদী ও পরিবেশ বাঁচানোর এই চেষ্টায় আপনার কী মতামত? আপনার মতামত কমেন্টে জানান এবং এই সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিন! 🌱

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ