সিলেট, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হিসেবে পরিচিত, বর্তমানে ভয়াবহ পরিবেশগত ধ্বংসের মুখে। টিলা, পাহাড়, নদী, বাগান, কৃষিজমি—সবখানে চলছে পরিবেশের ওপর নির্যাতন। নিষেধাজ্ঞা, আইনি বাধা, অভিযান কিছুই যেন কাজে আসছে না। সিলেটের এয়ারপোর্ট থানার ব্রাহ্মণছড়া চা বাগান এলাকায় সম্প্রতি একটি মামলার ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযোগ করেছে যে, টিলা কেটে মাটি বিক্রি করা হয়েছে। এই ঘটনা শুধুমাত্র একটি বিচ্ছিন্ন উদাহরণ নয়, বরং সিলেটজুড়ে চলমান পরিবেশগত দুর্যোগের প্রতিচ্ছবি।
সিলেটের পরিবেশের ওপর নির্যাতন: বর্তমান পরিস্থিতি
সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ইতিহাসে ছড়িয়ে থাকা শতবর্ষী টিলা এবং বনভূমি এখন লোভী মানুষের হাতে ধ্বংস হচ্ছে। প্রতি বছর আরও বেশি আবাসন প্রকল্প নির্মাণের জন্য পাহাড় ও টিলা কাটা হচ্ছে, এবং সেখানে নানান ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
সিলেট নগরীর উপকণ্ঠ এবং প্রায় প্রতিটি উপজেলায় এই ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা কোম্পানীগঞ্জ, জাফলং, এবং গোয়াইনঘাট এলাকায় যেখানে পাথর উত্তোলনের নামে পরিবেশের ওপর নির্যাতন চলছে। সেখানে ‘বোমা মেশিন’ ব্যবহার করে রাতের আঁধারে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। এর ফলে নদীগুলোর স্বাভাবিক গতিপথ হারিয়ে যাচ্ছে এবং জলজ জীববৈচিত্র্য বিপন্ন হচ্ছে। নদীর পাথর উত্তোলনের ফলে নদীর গভীরতা কমে যাচ্ছে, এবং একে একে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে নদীজীবন।
রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক প্রভাব
পরিবেশ সংরক্ষণের কাজের জন্য সরকারের উদ্যোগ অনেকটাই নীরব। পরিবেশ ধ্বংসের এসব কার্যক্রম প্রশাসনের অবহেলায় চলতে থাকছে। সিলেটের পরিবেশ আন্দোলনের নেতারা জানান, প্রশাসন ও রাজনৈতিক ছত্রছায়া এই পরিবেশগত ধ্বংসের মূল কারণ। তারা অভিযোগ করেন যে, পরিবেশের ক্ষতি সৃষ্টিকারী কাজগুলো প্রশাসনের নজরের বাইরে ঘটছে, বা সচেতনভাবে চোখ বন্ধ করা হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর এবং খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো, যারা পরিবেশ রক্ষা এবং খনিজ সম্পদ উত্তোলনকে নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে, তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এছাড়া, অনেকেই মনে করেন যে, খনিজ সম্পদের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব জেলা প্রশাসনকে দেওয়ার সময় এসেছে। বর্তমানে সরকারের নীতিমালা কার্যকর না হলে সিলেটের পরিবেশের এই অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে।
উল্লেখযোগ্য পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট শাখা পরিবেশ রক্ষায় বেশ কিছু মামলা করেছে। তাদের দাবি, প্রশাসন এবং রাজনৈতিক ইচ্ছায় সিলেটের পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তারা বলেন, “আমরা জানি যে, ক্ষমতার পরিবর্তনের পরেও পরিবেশের অবস্থা তেমন বদলাবে না যদি প্রশাসন এবং রাজনৈতিক দলগুলো এই বিষয়ে সচেতন না হয়।”
পাহাড় ও নদী রক্ষায় করণীয়
সিলেটের পরিবেশ রক্ষায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রথমত, প্রশাসনের আরও তৎপরতা বৃদ্ধি করতে হবে, বিশেষ করে পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। দ্বিতীয়ত, পরিবেশের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে সরকারের খনিজ সম্পদ ব্যবস্থাপনা নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে হবে। তৃতীয়ত, স্থানীয় জনগণের মধ্যে পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে, কারণ তারা যদি সচেতন না হয়, তাহলে এই দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি পরিবর্তন করা কঠিন হবে।
শেষ কথা: পরিবেশ রক্ষা আমাদের দায়বদ্ধতা
আজকে যদি আমরা সিলেটের পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ না নেই, তাহলে ভবিষ্যতে এই সৌন্দর্য আর থাকবে না। জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশের ক্ষতি সিলেটের শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকেই ধ্বংস করবে না, এটি আমাদের জীবিকা এবং সুস্থ জীবনযাত্রাকেও হুমকির মুখে ফেলবে। সিলেটের প্রতিটি মানুষ, প্রশাসন এবং রাজনীতিবিদদের উচিত, পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে একত্রে কাজ করা এবং সিলেটের সুন্দর প্রকৃতিকে সুরক্ষা দেওয়া।
সিলেটের পরিবেশের ওপর চলমান নির্যাতন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব শুধু এই অঞ্চলের নয়, বরং পুরো দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। আমাদের উচিত পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য আরও সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা, অন্যথায় ভবিষ্যতে এই পরিবেশের সৌন্দর্য কেবলই অতীতের স্মৃতি হয়ে দাঁড়াবে।
Call-to-Action (CTA):
আপনি যদি পরিবেশ সংরক্ষণের প্রতি আগ্রহী হন এবং সিলেটের পরিবেশ রক্ষায় অবদান রাখতে চান, তাহলে আমাদের [পণ্য/সেবা] কিনে পরিবেশ রক্ষার উদ্যোগে অংশ নিন। আপনার সাহায্যে আমরা একসাথে সিলেটের পরিবেশ রক্ষা করতে সক্ষম হবো।