কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে ওরিয়ন গ্রুপের ৬৩৫ মেগাওয়াট কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশকর্মী এবং স্থানীয় জনগণ। গত মঙ্গলবার ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। বক্তারা বলেন, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে দেশের জনগণের উপর আরেকটি নতুন ‘ক্যাপাসিটি চার্জের বোঝা’ চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এটা কি নতুন ঝুঁকি?
মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের ফলে দেশের পরিবেশে একটি বড় ধাক্কা আসতে পারে। বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়নবিষয়ক কর্মজোটের (বিডব্লিউজিইডি) সদস্যসচিব জানান, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণের পরিকল্পনা অবৈধ এবং এটি দেশের “থ্রি জিরো” নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিবছর ৪১ লাখ ৩৮ হাজার টন কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং অন্যান্য ক্ষতিকর গ্যাসের নিঃসরণ হবে, যা পরিবেশ এবং মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের হুমকি
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে প্রতি বছর ১ হাজার ৩২৮ টন ফ্লাই অ্যাশ এবং ১৩৩ টন বটম অ্যাশ ছড়াবে, যা বক্ষব্যাধি ও ক্যানসারের অন্যতম কারণ হতে পারে। তাছাড়া, বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বছরে ৭০০ মিলিয়ন টন গরম পানি সমুদ্রে নিষ্কাশিত হবে, যা সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক।
সৌরশক্তি বা নবায়নযোগ্য জ্বালানি: একটি বিকল্প
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেছেন, কয়লা আমদানির জন্য প্রতিবছর ১ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা ব্যয় হবে এবং ২৫ বছরে ৩৯ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা খরচ হবে। বক্তারা বলেন, এই বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে দুটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা সম্ভব, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয় এবং দীর্ঘমেয়াদে খরচেও সাশ্রয় হবে।
শিশু ও গর্ভবতী নারীদের জন্য বিপজ্জনক প্রভাব
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটর জানিয়েছেন, কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রভাব শিশু ও গর্ভবতী নারীদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে তারা পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছেন, কারণ এই ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র মানুষের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি
সংবাদ সম্মেলনে আরও পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি উপস্থাপন করা হয়:
- অবিলম্বে ওরিয়নের মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের ত্রুটিপূর্ণ ইআইএ বাতিল করা হোক।
- নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যর্থ হলে ওরিয়নের সঙ্গে ২০১৬ সালের পিপিএ বাতিল করা হোক।
- রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে ওরিয়ন পাওয়ারের ১০ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকার ঋণ প্রস্তাব বাতিল করা হোক।
- নবায়নযোগ্য জ্বালানি পরিকল্পনার বিরোধী ইজারা বাতিল করা হোক এবং সরকারি ২ হাজার একর জমিতে সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণ করা হোক।
- জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন না করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার ‘থ্রি জিরো’ নীতি বাস্তবায়ন করা হোক।
আসন্ন গণশুনানি
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় যে, আগামী শনিবার (১০ মে) মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে একটি গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এই গণশুনানিতে আরো বিস্তারিত আলোচনা এবং জনমত সংগ্রহের সুযোগ থাকবে।
Conclusion
এটি শুধু একটি স্থানীয় সমস্যা নয়, বরং দেশের সামগ্রিক পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। এখন আমাদের দায়িত্ব, ভবিষ্যতের সুরক্ষায় এই ধরনের ক্ষতিকর প্রকল্প বন্ধ করা এবং পরিবেশবান্ধব বিকল্প শক্তির দিকে এগিয়ে যাওয়া।
Call to Action
এই আন্দোলনে আপনার সমর্থন জানাতে এবং পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা বাড়াতে আমাদের সঙ্গে যোগ দিন। যদি আপনি পরিবেশ নিয়ে আরও জানতে চান, তবে আমাদের ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপনার মতামত শেয়ার করুন!