30.7 C
Bangladesh
রবিবার, জুন ২২, ২০২৫
spot_img

রাজশাহীতে শব্দদূষণের তীব্রতা: নগরবাসী ও পরিবেশের জন্য বড় সংকেত

রাজশাহী শহর আজকাল এক নতুন পরিবেশগত সমস্যার সম্মুখীন। শব্দদূষণের মাত্রা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা শুধু নগরবাসীর স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়, বরং পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের উপরও গভীর প্রভাব ফেলছে। ২০২2 সালে শহীদ এ. এইচ. এম. কামারুজ্জামান চত্বরে শব্দের মাত্রা ছিল ৯০ ডেসিবেল, কিন্তু ২০২3 সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৯৭.২ ডেসিবেল হয়ে গেছে, যা মানুষের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। রাজশাহীতে শব্দদূষণের তীব্রতা

রাজশাহী শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং যানবাহনের শব্দ থেকে শুরু করে নির্মাণকাজের তীব্র শব্দ—এ সমস্তই শব্দদূষণ বাড়ানোর প্রধান কারণ। এই শব্দদূষণ শহরের বাসিন্দাদের শুধু শারীরিকভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, বরং এটি শহরের পরিবেশকে আরও বিপন্ন করে তুলছে।

শব্দদূষণ এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি

রাজশাহী শহরে শব্দদূষণের বৃদ্ধি মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। শব্দদূষণের কারণে শারীরিক সমস্যার মধ্যে শ্রবণশক্তি হ্রাস, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, ঘুমের ব্যাঘাত, রক্তচাপ বৃদ্ধি, হৃদরোগের ঝুঁকি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস হতে পারে। এটি স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের মতো জীবননাশক রোগের ঝুঁকিও বাড়ায়।

শব্দদূষণ নিয়ে কাজ করা পরিবেশবাদী সংস্থা জানিয়েছে, গত চার বছর ধরে রাজশাহীতে শব্দদূষণের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং ২০২3 সালের তুলনায় ২০২4 সালে তা আরও বেড়েছে। এর ফলে শহরের জনগণ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা এবং মানসিক অবসাদে ভুগছে। এই পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ হতে পারে, বিশেষ করে যদি শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়া হয়। রাজশাহীতে শব্দদূষণের তীব্রতা

শব্দদূষণের উৎস এবং এর বিস্তার

শব্দদূষণের সবচেয়ে বড় উৎস রাজশাহীতে যানবাহন এবং হর্নের অতিরিক্ত ব্যবহার। যানবাহনগুলোর অযথা হর্ন বাজানো, নির্মাণকাজের শব্দ, ব্যবসায়ী এলাকা এবং আবাসিক এলাকায় সমবায়িত শব্দ দূষণ বাড়াচ্ছে।

শহরের ব্যস্ততম এলাকা যেমন কামারুজ্জামান চত্বর, সাহেববাজার, ভদ্রা, তালাইমারী, লক্ষ্মীপুর এবং অন্যান্য প্রধান রাস্তা ও বাজারে শব্দের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, সেখানে ৯৭ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দ পাওয়া গেছে, যা আন্তর্জাতিক মানের চেয়ে অনেক বেশি। এসব জায়গায় শব্দের মাত্রা ৫০ থেকে ৬০ ডেসিবেল থাকা উচিত, কিন্তু সেগুলি অনেক বেশি হওয়ায় মানুষের স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে।

নগর কর্তৃপক্ষের ভূমিকা

রাজশাহী শহরের পরিবেশের উন্নতির জন্য নগর কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ প্রশাসন সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে, তবে তা পর্যাপ্ত নয়। রাজশাহী মহানগর পুলিশ এবং পরিবেশ অধিদফতর বিভিন্ন সচেতনতা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তাদের প্রচেষ্টা এখনও শব্দদূষণের নিয়ন্ত্রণে খুব একটা সফল হয়নি। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে শব্দদূষণ কমানোর চেষ্টা করছে, তবে প্রভাবশালী মানুষের কারণে কিছুক্ষেত্রে তাদের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক কবির হোসেন জানিয়েছেন যে, রাজশাহী শহর ২০২2 সালে জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির রিপোর্টে বিশ্বের চতুর্থ সবচেয়ে শব্দদূষণকারী শহর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এটি অবশ্যই একটি বড় উদ্বেগের বিষয়, কারণ এটি শহরের পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্য উভয়ের জন্যই বিপদজনক।

সমাধান: গাছ লাগানো এবং সচেতনতা বৃদ্ধি

শব্দদূষণ কমানোর জন্য প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা গাছ লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন। গাছ শব্দ শোষণ করতে সক্ষম, এবং এটি পরিবেশের জন্যও উপকারী। আম, জাম, নিম, শজনে গাছ এবং অন্যান্য ফলজ গাছের লাগানোর মাধ্যমে শব্দদূষণ এবং বায়ুদূষণ কমানো যেতে পারে।

এছাড়া, নগর কর্তৃপক্ষের উচিত শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন প্রয়োগ করা, যেমন অযথা হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি দেওয়া। শব্দদূষণের বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশগত শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে নাগরিকদের সচেতন করা জরুরি।

উপসংহার

রাজশাহীতে শব্দদূষণ একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে উঠেছে, যা নগরবাসীর স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে পরিবেশগত বিপর্যয়, যা ভবিষ্যতের জন্য আরও ভয়াবহ হতে পারে। তাই, কর্তৃপক্ষ, জনগণ এবং পরিবেশবাদী সংগঠনগুলিকে একত্রে কাজ করে এই সমস্যা সমাধান করতে হবে।

আপনি কি মনে করেন, কীভাবে আমরা শব্দদূষণ কমাতে পারি? কমেন্টে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না!

💬 আমাদের সাথে এই আলোচনায় যোগ দিন, এবং শব্দদূষণ কমাতে আপনার পরামর্শ শেয়ার করুন!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ