বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা বাড়ছে, বিশেষ করে বাংলাদেশে। বেসরকারি আবহাওয়া পূর্বাভাস ওয়েবসাইট আবহাওয়া.কমের প্রধান আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ সম্প্রতি সিলেট বিভাগসহ চারটি জেলায় বন্যার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আগামী সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকায় কৃষকরা বিশেষ প্রস্তুতি নিতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। চলুন, এই বিপর্যয়ের প্রস্তুতিতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, তা জানি। বন্যার প্রভাবে কৃষি খাত
১. ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ এবং বন্যার আশঙ্কা
আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে, যা ‘শক্তি’ নামক ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি মে মাসের ২৩ থেকে ২৮ তারিখের মধ্যে সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের ওড়িশা উপকূল এবং বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূলের মধ্যবর্তী অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে। তবে, পশ্চিমবঙ্গ ও খুলনা বিভাগে এর প্রভাব কিছুটা বেশি হতে পারে।
এদিকে, সিলেট বিভাগের কিছু জেলা, বিশেষ করে সুনামগঞ্জ এবং সিলেট জেলায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এখানকার হাওড় এলাকায় বিলগুলো পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হতে পারে, যেহেতু নিয়মিত বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। বন্যার প্রভাবে কৃষি খাত
২. কৃষকদের জন্য জরুরি নির্দেশনা
ধান কাটা এবং প্রস্তুতি
এমন পরিস্থিতিতে কৃষকদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সিলেট বিভাগের হাওড় এলাকায় যতটা সম্ভব ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ২০ মে’র মধ্যে যদি কোনো বিলে ধান কাটা অবশিষ্ট থাকে, তবে তা কেটে ফেলতে হবে। কারণ, এই সময়ের মধ্যে জমির পানিতে প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা কৃষকদের জন্য বিপদজনক হতে পারে।
এছাড়া, আগাম বন্যার সম্ভাবনা থাকায় কৃষকদের জমি প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি সবুজ ফসলের ক্ষেতগুলো প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে যারা সবজি বা অন্যান্য ফসল চাষ করেন, তাদেরও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। বন্যার প্রভাবে কৃষি খাত
৩. জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
বন্যা এবং কৃষি সংকট
জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বজুড়ে কৃষি খাতকে বিপদে ফেলেছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন। বিশেষ করে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা এবং মৌলভীবাজার জেলা জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত এলাকাগুলির মধ্যে রয়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢল এসব অঞ্চলের জন্য বিশেষভাবে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।
পরিবেশ রক্ষা ও সজাগতা
এমন পরিস্থিতিতে, কৃষকদের পাশাপাশি সরকার এবং পরিবেশবিদদের উচিত, যথাসম্ভব সজাগ থাকা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাসের সঙ্গে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করতে প্রতিটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সক্রিয় ভূমিকা রাখা জরুরি।
৪. প্রস্তাবিত প্রস্তুতি এবং পদক্ষেপ
নগর কৃষি ও সবুজায়ন
নগর কৃষি এবং সবুজায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কৃষকরা বন্যার পরে পুনরায় ফসল চাষের জন্য প্রস্তুত হতে পারেন। এছাড়া, কৃষকদের জন্য জরুরি সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে কিষাণ প্রকল্প এবং অনুদান দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া উচিত। বন্যা পরবর্তী সহায়তা এবং পুনর্বাসন কার্যক্রমগুলির জন্য বিশেষ তহবিল ঘোষণা করা যেতে পারে।
মৌসুমী ফসলের সঠিক নির্বাচন
কৃষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে তাদের এলাকায় জলবায়ুর পরিস্থিতি বুঝে সঠিক ফসল নির্বাচন করা। এই ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা থাকলে, খরা সহিষ্ণু বা জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল জাতের ফসল চাষ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
৫. সরকারের ভূমিকা
সরকারের তৎপরতা
বন্যা মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। বাংলাদেশে বন্যার পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে দ্রুত ত্রাণ বিতরণ, উদ্ধার কাজ এবং কৃষকদের জন্য আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং নদীর তীর রক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া গেলে বন্যার ক্ষতি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
৬. আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ এবং প্রস্তুতি
জলবায়ু পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব
জলবায়ু পরিবর্তন ভবিষ্যতে আরও বেশি অস্বাভাবিক আবহাওয়ার সৃষ্টি করবে, যা কৃষকরা মোকাবিলা করতে পারবেন না যদি তাদের প্রস্তুতি না থাকে। তাই, কৃষকরা প্রয়োজনীয় শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং সরকারের সহায়তায় নিজেদের প্রস্তুত রাখতে হবে। একই সাথে, জনগণের সচেতনতা এবং শিক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ।
শেষ কথা
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জলবায়ু পরিবর্তন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি করছে, এবং বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা এবং মৌলভীবাজার জেলায় বন্যার আশঙ্কা এবং এর প্রভাব কৃষকদের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তবে, যদি সঠিক সময়ে প্রস্তুতি নেওয়া যায় এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা মেনে চলা হয়, তবে এই বিপর্যয়ের প্রভাব অনেকটাই কমানো সম্ভব।
কল টু অ্যাকশন
আপনি কি কৃষির উন্নয়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আরও জানতে চান? আমাদের সাথে যুক্ত হয়ে এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করুন এবং ভবিষ্যতের প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিন।