এপ্রিল এবং মে মাস সাধারণত বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য ঘূর্ণিঝড়প্রবণ সময় হয়ে থাকে। চলতি মে মাসের শেষের দিকে, ২৪ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এই নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়, তবে আবহাওয়াবিদরা এটি নিয়ে সতর্ক রয়েছেন। আবহাওয়া অফিসের সতর্কতা
আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, নিম্নচাপের আশঙ্কা বর্তমানে ৭০ শতাংশ, কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা এখনও ৩০ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ঘূর্ণিঝড়ের এই সম্ভাবনা, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য একটি বড় বিপদের সংকেত হতে পারে, কারণ অতীতের বছরগুলোতে মে মাসেই নানা ধরণের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে।
নিম্নচাপ এবং ঘূর্ণিঝড়: অতীতের ঘটনা ও বর্তমান পরিস্থিতি
মে মাস সাধারণত ঘূর্ণিঝড়ের জন্য পরিচিত মাস। গত বছর ২৬ মে, ঘূর্ণিঝড় রিমাল বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানে, এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সেই ঘূর্ণিঝড়ের মত এবারও পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক হতে পারে। তবে, এবারের নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে কি না, তা এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ বলেন, “আমরা এখন একটি সম্ভাব্য নিম্নচাপের পূর্বাভাস পাচ্ছি। এই নিম্নচাপটি দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে তৈরি হতে পারে, কিন্তু এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে কি না, সেটা কিছুদিন পরেই নির্ধারিত হবে।” আবহাওয়া অফিসের সতর্কতা
সামুদ্রিক তাপমাত্রা বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হওয়ার জন্য উপযোগী হলেও, এর গতিপথ ও শক্তি সঞ্চয় সম্পর্কে আরও স্পষ্ট তথ্য জানা যাবে পরবর্তী কয়েক দিনের মধ্যে।
ঘূর্ণিঝড়ের নাম হবে ‘শক্তি’
এটি যদি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়, তবে এর নাম হবে ‘শক্তি’, যা শ্রীলঙ্কার দেওয়া নাম। নামকরণ প্রক্রিয়াটি আন্তর্জাতিক ঘূর্ণিঝড় নামকরণের নিয়ম অনুসরণ করে করা হয়, এবং এতে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো তাদের প্রস্তাবিত নামগুলো ব্যবহার করে।
আবহাওয়া অফিসের সতর্কবার্তা ও প্রস্তুতি
আবহাওয়া অধিদপ্তর স্যাটেলাইট চিত্র পর্যবেক্ষণ করে এবং নৌপরিবহনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আগাম সতর্কবার্তা পাঠিয়ে প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। সেন্ট্রাল আবহাওয়া স্টেশন থেকে জানানো হয়েছে যে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নিম্নচাপের গঠন এবং সম্ভাব্য গতিপথ সম্পর্কে আরও স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যাবে।
আবহাওয়াবিদরা অবশ্য জানান, “এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, তবে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।”
জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশের ওপর প্রভাব
জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমানে বিশ্বব্যাপী একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরের মতো অঞ্চলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ঘূর্ণিঝড়ের গতি ও তীব্রতা বৃদ্ধি করতে পারে। সুন্দরবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপকূলীয় অঞ্চলে এই ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব মারাত্মক হতে পারে। তাই, আবহাওয়া সংক্রান্ত যেকোনো সতর্কতা ও প্রস্তুতি নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবহাওয়া অফিসের সতর্কতা
বাংলাদেশের উপকূলে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য সরকারি প্রস্তুতির পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। যেহেতু এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে জীবন এবং সম্পদের ক্ষতি হয়, তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি রোধ করতে সহায়ক হতে পারে।
এখন কি করবেন?
এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, তবে আবহাওয়া পরিবর্তনের দিকে নজর রাখা উচিত। আপনার এলাকা যদি ঘূর্ণিঝড়ের শিকার হতে পারে, তবে সরকার বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশিকা অনুসরণ করুন এবং নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে প্রস্তুতি নেওয়া খুবই জরুরি, যা আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করবে।
শেষ কথা: প্রস্তুতি গ্রহণের গুরুত্ব
যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে প্রস্তুতি গ্রহণ ও তথ্য জানার গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমানে আবহাওয়া অধিদপ্তর সতর্কবার্তা পাঠাচ্ছে, এবং আরো তথ্যের জন্য তাদের প্রতি নজর রাখা উচিত।
আপনার কী প্রস্তুতি নেওয়া আছে? আপনার এলাকার সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবিলায় আপনি কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন? কমেন্টে আপনার ভাবনা শেয়ার করুন।
আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না!