30.5 C
Bangladesh
রবিবার, জুন ১, ২০২৫
spot_img

প্রশাসন ইজারা দিচ্ছে, পাউবো সতর্ক করছে: শরীয়তপুরের মানুষ কেন এত শংকিত?

বাংলাদেশের নদ-নদীগুলো আমাদের জীবন ও জীবিকার অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশেষ করে পদ্মা নদী, যা তার বিশালতা এবং খরস্রোতের জন্য পরিচিত, এটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পরিবেশ ও জনজীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। সম্প্রতি শরীয়তপুরের একটি উপজেলায় পদ্মা নদীতে বালুমহাল ঘোষণা করে ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন, যা নিয়ে পদ্মার তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে তীব্র শঙ্কা ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এই উদ্বেগ কেবল স্থানীয় সমস্যা নয়, এটি বৃহত্তর জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত ঝুঁকির এক গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত। শরীয়তপুরের মানুষ কেন এত শংকিত

বিষয়টি নতুন নয়। গত বছরও একই এলাকায় বালুমহাল ইজারা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তখন স্থানীয়দের তীব্র প্রতিরোধ এবং উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রশাসন সেই প্রক্রিয়া বন্ধ করতে বাধ্য হয়। এক বছর পর আবার একই এলাকার আরেকটি অংশে বালুমহাল ইজারা দেওয়ার খবর শুনে পদ্মাপাড়ের মানুষের মনে নতুন করে ভয়াবহ ভাঙনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই উদ্যোগ বন্ধের দাবিতে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন সেখানকার মানুষ। শরীয়তপুরের মানুষ কেন এত শংকিত

প্রশাসনের উদ্যোগ এবং সরকারি কর্তৃপক্ষের ভিন্ন মত

স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, বালুমহাল ঘোষণার জন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তর যেমন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), পরিবেশ অধিদপ্তর এবং মৎস্য বিভাগ থেকে মতামত নেওয়া হয়েছে এবং সব কটি দপ্তরই নাকি ইতিবাচক প্রতিবেদন দিয়েছে। এই ইতিবাচক প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই বালুমহাল ঘোষণার প্রস্তাব বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে এবং সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মতামতে কিন্তু ভিন্ন চিত্র উঠে এসেছে।

পাউবো জানিয়েছে, যে স্থানে বালুমহাল ঘোষণার প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটি পদ্মা-মেঘনার মিলনস্থল থেকে উজানের একটি ডুবোচর। গুরুত্বপূর্ণ তীর রক্ষা প্রকল্পগুলো এই স্থানের কাছাকাছিই অবস্থিত। পাউবো তাদের মতামতে উল্লেখ করেছে যে, ওই এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলা হলে নদীর স্বাভাবিক রূপ (হাইড্রোমরফোলজি) এবং গতিপথের পরিবর্তন হতে পারে। এর ফলে নদীর প্রবাহ তীরের দিকে চলে আসতে পারে, যা ভয়াবহ ভাঙনের সৃষ্টি করবে।

পাউবোর একজন উর্ধ্বতন প্রকৌশলী বলেন, এই এলাকাটি এমনিতেই ভাঙনপ্রবণ। নদীতে বালু জমে চর তৈরি হয় এবং সেই চর অপসারণ করলে কখনো ভাঙন কমে, আবার কখনো বাড়ে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বালু উত্তোলন করতে হলে অবশ্যই হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভে করে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কাজ করতে হবে। তা না হলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে ভাঙন বাড়বে।

পদ্মাপাড়ে বসবাসকারী মানুষের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা

পদ্মার তীরবর্তী এলাকার মানুষের কাছে ভাঙন এক ভয়ঙ্কর বাস্তব। একজন দীর্ঘদিনের বাসিন্দা, যিনি ইতিমধ্যে কয়েক দফা ভাঙনে তার ১০ একর ফসলি জমি হারিয়েছেন এবং অবশিষ্ট সামান্য জমিও নদীর তীরে রয়েছে, তিনি বলেন যে, কাঁচিকাটার চারপাশ দিয়েই নদী বয়ে গেছে এবং পদ্মা ও মেঘনার তীব্র ভাঙন এখানে বিদ্যমান। তার মতো হাজার হাজার মানুষ নদী ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। বর্ষা মৌসুম এলেই তাদের মনে দুশ্চিন্তা জেঁকে বসে যে কখন আবার ভাঙনের মুখে পড়তে হয়। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস, এই এলাকায় বালুমহাল ইজারা দেওয়া হলে ভাঙন আরও মারাত্মক আকার ধারণ করবে। শরীয়তপুরের মানুষ কেন এত শংকিত

বর্তমানে ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম সরাসরি ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে এবং অন্তত দুই হাজার পরিবার ভাঙনের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। পদ্মা নদীর মাঝখানে অবস্থিত হওয়ার কারণে এই এলাকাটি এমনিতেই অত্যন্ত ভাঙনপ্রবণ।

জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশের উপর প্রভাব

পদ্মা নদীর মতো বৃহৎ নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন কেবল স্থানীয় ভাঙন সমস্যা তৈরি করে না, এর সুদূরপ্রসারী পরিবেশগত প্রভাব রয়েছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত।

  1. নদীর গতিপথ পরিবর্তন ও বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি: বালু উত্তোলন নদীর তলদেশের ভারসাম্য নষ্ট করে, যা নদীর গতিপথ বদলে দিতে পারে। এটি নদীর বাস্তুতন্ত্রের (Ecosystem) জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর প্রজনন ক্ষেত্র ও আবাসস্থল ধ্বংস হয়।
  2. ভূগর্ভস্থ পানির স্তর: নদীর তলদেশের বালু ভূগর্ভস্থ পানির অন্যতম উৎস। অতিরিক্ত বালু উত্তোলনে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যেতে পারে, যা কৃষি ও দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে।
  3. উপকূলীয় সুরক্ষা: নদী অববাহিকার প্রাকৃতিক অবস্থা উপকূলীয় এলাকার পরিবেশের সাথেও সম্পর্কিত। নদীর পলিবহন প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে উপকূলীয় ভূমি গঠনে সমস্যা হতে পারে।
  4. জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বৃদ্ধি: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাত এবং নদীর পানির প্রবাহে অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছে। এক সময় প্রচুর বৃষ্টিপাত বা উজানের ঢল হলে নদীর পানির চাপ বাড়ে। অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণে নদীর নিজস্ব পানি ধারণ ক্ষমতা বা প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কমে যায়, ফলে আকস্মিক বন্যা বা ভাঙনের তীব্রতা আরও বেড়ে যেতে পারে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করার ক্ষমতা কমে যায়।

শরীয়তপুরের এই অংশে গত ১০ বছরে পদ্মার ভাঙনে অন্তত ২৫ হাজার পরিবার গৃহহীন হয়েছে। ভাঙন রোধে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেও পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। বালু উত্তোলনের মতো কার্যক্রম এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।

আমাদের কী করণীয়? পরিবেশ রক্ষায় আপনার ভূমিকা

পদ্মার বালুমহাল ইজারা নিয়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা কেবল স্থানীয় নয়, এটি জাতীয় পর্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত সমস্যা। রাজস্ব আয়ের উৎস হিসেবে বালুমহাল ইজারা দেওয়া হলেও, এর পরিবেশগত ও সামাজিক মূল্য অনেক বেশি হতে পারে। পদ্মাপাড়ের মানুষের জীবন, জীবিকা এবং বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিকে উপেক্ষা করা যায় না। জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে পরিবেশের উপর চাপ কমানো আমাদের সবার দায়িত্ব।

  1. সচেতনতা বৃদ্ধি: বালু উত্তোলনের পরিবেশগত প্রভাব এবং নদীর ভাঙন সম্পর্কে নিজে জানুন এবং অন্যদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করুন। এই পোস্টটি শেয়ার করে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করুন।
  2. কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ: স্থানীয় প্রশাসন বা জাতীয় পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই উদ্বেগের কথা জানানোর চেষ্টা করুন। পরিবেশ রক্ষা এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মেনে চলার জন্য তাদের কাছে দাবি জানান।
  3. পরিবেশবাদী উদ্যোগকে সমর্থন: যারা নদী রক্ষা বা পরিবেশ সংরক্ষণে কাজ করে, এমন বিশ্বস্ত সংগঠনকে আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী আর্থিক বা অন্য কোনোভাবে সহায়তা করুন। আপনার এই সমর্থন পরিবেশ রক্ষায় বিনিয়োগের সমান।
  4. পরিবেশ-বান্ধব জীবনযাপন: পরিবেশের উপর ব্যক্তিগত প্রভাব কমানোর চেষ্টা করুন। এটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আপনার ছোট অবদান।

পদ্মা আমাদের সম্পদ। এর সুরক্ষা আমাদের সবার সম্মিলিত দায়িত্ব। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন এবং পরিবেশ ধ্বংস করে আমরা হয়তো সাময়িক কিছু আর্থিক লাভ পেতে পারি, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এর মূল্য অনেক বেশি হবে – যা পূরণ করা কঠিন হতে পারে। আসুন, পদ্মার এই কান্না শুনি এবং পরিবেশ রক্ষায় নিজেদের ভূমিকা পালন করি।

পদ্মা বা অন্য কোনো নদী থেকে বালু উত্তোলন আপনার এলাকায় কী ধরনের প্রভাব ফেলছে? নদী রক্ষায় আপনি কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারেন বলে মনে করেন? নিচে কমেন্ট করে আপনার মতামত জানান এবং এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি শেয়ার করে অন্যদেরও জানানোর সুযোগ করে দিন!

অবশ্যই, আপনার ব্লগ পোস্টের জন্য এখানে কিছু আকর্ষণীয় শিরোনাম, মেটা ডিসক্রিপশন এবং ফেসবুক পোস্টের ড্রাফট দেওয়া হলো, যা মূল বিষয়বস্তুর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং আকর্ষণীয়। নির্দেশ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়নি।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ