25.7 C
Bangladesh
শুক্রবার, মে ৩০, ২০২৫
spot_img

উজানের বৃষ্টিতে বন্যার শঙ্কা! শেরপুরে পাহাড়ি ঢলে ফুলে উঠেছে নদী

প্রকৃতির নিজস্ব নিয়ম আছে, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সেই নিয়মে যেন বারবার ছন্দপতন ঘটছে। গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহের পর অসময়ের বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল দেশের অনেক এলাকাতেই নতুন করে দুর্যোগের শঙ্কা তৈরি করছে। সম্প্রতি শেরপুরে নদ-নদীর পানি আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া তেমনই এক alarming sign বা সতর্ক সংকেত। এই ঘটনা কেবল একটি এলাকার সমস্যা নয়, এটি বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত ঝুঁকির এক করুণ চিত্র। উজানের বৃষ্টিতে বন্যার শঙ্কা

ভারতের মেঘালয় রাজ্যে টানা কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টির কারণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। একটি নির্দিষ্ট নদীতে পানি ইতিমধ্যেই বিপৎসীমার ১৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা খুবই উদ্বেগের। অন্যান্য নদীর পানিও বাড়ছে এবং এই ধারা অব্যাহত থাকলে জেলার দুটি উপজেলায় বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। উজানের বৃষ্টিতে বন্যার শঙ্কা

নদীর পানি বৃদ্ধি এবং পূর্বাভাস

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র অনুযায়ী, একটি গুরুত্বপূর্ণ নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে উঠলেও, জেলার অন্য দুটি নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। তবে উজানের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হতে পারে। স্থানীয় এলাকার বাসিন্দারা এবং জনপ্রতিনিধিরা মনে করছেন, এভাবে পানি বাড়তে থাকলে নদীর বাঁধ ভেঙে বা উপচে পার্শ্ববর্তী এলাকা প্লাবিত হতে পারে, যা ইতিমধ্যেই তাদের মনে বন্যার ভয় তৈরি করেছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকেও একটি সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত ময়মনসিংহ, সিলেট এবং রংপুর বিভাগের নিম্নাঞ্চলগুলো সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে। এই প্লাবনে কেবল জনজীবনই নয়, কৃষি খাতেও বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কৃষকদের দ্রুত তাদের আধা পাকা ধান কেটে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশেষ করে যে ধানগুলো প্রায় পেকে গেছে, সেগুলো দ্রুত সংগ্রহ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই বেশিরভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে, তবে বাকি ধানগুলোও দ্রুত কাটার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তন এবং পাহাড়ি ঢল: যোগসূত্র কোথায়?

এ ধরনের আকস্মিক পাহাড়ি ঢল এবং বন্যা জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে কীভাবে সম্পর্কিত? বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাতের ধরনে পরিবর্তন আসছে। কিছু এলাকায় বৃষ্টি কমে যাচ্ছে, আবার কিছু এলাকায় অল্প সময়ে খুব বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে (cloudbursts)। উজানের পাহাড়ি অঞ্চলে অস্বাভাবিক ভারী বৃষ্টিপাত হলে দ্রুত বিপুল পরিমাণ পানি নিচের দিকে নেমে আসে, যা পাহাড়ি ঢল সৃষ্টি করে। নদীগুলোর পানি ধারণ ক্ষমতা সীমিত থাকায় দ্রুতই তা বিপৎসীমা ছাড়িয়ে যায় এবং বন্যা দেখা দেয়। এছাড়া, নদী দখল, পলি জমার কারণে নদীর গভীরতা কমে যাওয়া এবং বনভূমি ধ্বংস হওয়ার মতো পরিবেশগত সমস্যাগুলো পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তোলে, কারণ এগুলো পানি ধরে রাখতে বা প্রবাহকে স্বাভাবিক রাখতে বাধা দেয়।

এলাকার একজন বাসিন্দা উল্লেখ করেন, উজান থেকে ঢল নামলে তাদের নদীর পানি বাড়ে এবং এই ধারা অব্যাহত থাকলে বন্যা হতে পারে। স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিনিধিরাও জানিয়েছেন যে, নদীর পানি বাড়ছে এবং বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তাও পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন এবং সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। উজানের বৃষ্টিতে বন্যার শঙ্কা

সতর্কতা এবং প্রস্তুতি: জরুরি পদক্ষেপ

শেরপুরের এই পরিস্থিতি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, জলবায়ু পরিবর্তন কোনো দূর ভবিষ্যতের সমস্যা নয়, এটি এখনকার বাস্তবতা। এই ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে প্রস্তুত থাকা অত্যন্ত জরুরি।

  1. আবহাওয়ার পূর্বাভাস: সরকারি ও বিশ্বস্ত বেসরকারি সূত্র থেকে নিয়মিত আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং পানি বাড়ার খবর সম্পর্কে আপডেট থাকুন।
  2. কৃষি প্রস্তুতি: ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার কৃষকরা দ্রুত পাকা ও আধা পাকা ফসল কেটে নিন। কৃষি বিভাগের পরামর্শ মেনে চলুন।
  3. জরুরি সরঞ্জাম: শুকনো খাবার, পানি, প্রয়োজনীয় ওষুধ, টর্চলাইট, পাওয়ার ব্যাংক এবং জরুরি কাগজপত্র গুছিয়ে রাখুন।
  4. নিরাপদ আশ্রয়: বন্যার সময় নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকুন। গবাদি পশুর জন্যও নিরাপদ স্থানের ব্যবস্থা করুন।
  5. পরিবেশ সচেতনতা: নদী দখল বা দূষণ রোধে সচেতন হন। বৃক্ষরোপণে অংশ নিন। পরিবেশ সুরক্ষামূলক কার্যক্রমে সহায়তা করুন।

পরিবেশ রক্ষায় আপনার ভূমিকা

শেরপুরের এই ঘটনা আমাদের আরও একবার পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ভাবতে বাধ্য করছে। প্রকৃতির এই রুদ্ররূপ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। যারা পরিবেশ সংরক্ষণে কাজ করছেন, যারা দুর্যোগ মোকাবিলায় সাহায্য করছেন, তাদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা পরিবেশবাদী সংগঠনের উদ্যোগে আপনিও অংশ নিতে পারেন বা তাদের কার্যক্রমে আর্থিক সহায়তা দিতে পারেন। পরিবেশ-বান্ধব জীবনযাপন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি করাও এক ধরনের বিনিয়োগ, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষা দেবে।

শেরপুরের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি এক কঠিন পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। আসুন, এই সংবাদ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা সবাই আরও বেশি সতর্ক হই এবং পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় যার যার অবস্থান থেকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করি।

আপনার এলাকায় কি জলবায়ু পরিবর্তনের কোনো প্রভাব লক্ষ্য করছেন? পাহাড়ি ঢল বা বন্যার প্রস্তুতি নিতে আপনি কী করছেন? নিচে কমেন্ট করে আপনার অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ জানান এবং এই গুরুত্বপূর্ণ বার্তাটি অন্যদের সাথে শেয়ার করুন!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ