27.2 C
Bangladesh
রবিবার, জুন ১, ২০২৫
spot_img

২৯ মে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’? জেনে নিন সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে

জলবায়ু পরিবর্তনের যুগে আবহাওয়ার মতিগতি বোঝা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। গরমের তীব্র দাবদাহ শেষ না হতেই ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, চলতি মাসেই বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে আরও একটি ঘূর্ণিঝড়। এই খবর নিশ্চয়ই অনেকের মনেই কিছুটা উদ্বেগ তৈরি করেছে। ২৯ মে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’

আবহাওয়াবিদদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২৯ মে নাগাদ বঙ্গোপসাগরে একটি গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। যদি এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়, তবে এর নাম হবে ‘মন্থা’ (Mon-Tha)। এই নামটি দিয়েছে থাইল্যান্ড।

তবে এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি ঠিক কোন উপকূলের দিকে যাবে বা এর শক্তি কেমন হবে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, এই বিষয়ে আরও দু-এক দিনের মধ্যে বিস্তারিত জানা যাবে। ২৯ মে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’

আবহাওয়ার পূর্বাভাস মডেলগুলো কী বলছে?

বেসরকারি আবহাওয়াবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘আবহাওয়া ডট কম’-এর প্রধান আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ একটি ফেসবুক পোস্টে এই সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় নিয়ে কিছু তথ্য জানিয়েছেন। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের প্রধান প্রধান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার বিষয়ে প্রায় একমত।

পূর্বাভাস অনুযায়ী, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি ধাপে ধাপে শক্তি সঞ্চয় করবে। আগামী ২৭ মে এটি লঘুচাপ হিসেবে দেখা দিতে পারে, ২৮ মে নিম্নচাপ ও গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার এবং ২৯ মে নাগাদ পুরোদমে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পলাশ তাঁর পোস্টে আরও উল্লেখ করেছেন যে, বঙ্গোপসাগরে ‘মন্থা’ সৃষ্টি হওয়ার আগেই আরব সাগরে আরও একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির প্রবল আশঙ্কা রয়েছে, যার নাম হবে ‘শক্তি’ (Shakhti)। এই নামটি শ্রীলঙ্কার দেওয়া।

সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’-এর গতিপথ সম্পর্কে পলাশ ধারণা দিয়েছেন যে, এটি আগামী ২৮ মে মধ্যরাতের পর থেকে ২৯ মের মধ্যরাতের মধ্যে ভারতের ওড়িশা উপকূল ও মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উপকূলের মধ্যবর্তী যেকোনো স্থানের ওপর দিয়ে স্থলভাগে আঘাত করার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। ২৯ মে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’

সরকারি আবহাওয়া অধিদপ্তরের ধারণা কী?

যদিও বেসরকারি পূর্বাভাসে নির্দিষ্ট সময় ও সম্ভাব্য আঘাত হানার স্থানের কথা বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে ভিন্ন কথা। সরকারি আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন, চলতি মাসের শেষ নাগাদ বঙ্গোপসাগরে যে লঘুচাপ সৃষ্টি হবে, সেটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। তবে তাদের প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, এই ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের জন্য খুব বেশি শঙ্কার কারণ হবে না।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, প্রতিবছর বর্ষার আগে বঙ্গোপসাগরে এ ধরনের লঘুচাপ বা নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়া একটি নিয়মিত ঘটনা। চলতি মাসের শেষ দিকে বর্ষা মৌসুম শুরু হয়ে যাবে। ফলে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এই লঘুচাপটি খুব বেশি শক্তি সঞ্চয়ের আগেই বর্ষার প্রভাবে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তাই এটি খুব বড় বা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার শঙ্কা কম।

জলবায়ু পরিবর্তন ও আমাদের প্রস্তুতি

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ও তীব্রতা বাড়ছে কিনা, তা নিয়ে গবেষণা চলছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হওয়াটা অস্বীকার করার উপায় নেই। ‘মন্থা’ যদি শেষ পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ে রূপ না-ও নেয় বা বাংলাদেশের দিকে না-ও আসে, তবুও এই ধরনের পূর্বাভাস আমাদের মনে করিয়ে দেয় প্রকৃতির সামনে আমরা কতটা নাজুক।

সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্যক্তিগত ও সম্মিলিত প্রস্তুতি রাখা অত্যন্ত জরুরি। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে নিয়মিত নজর রাখা, জরুরি অবস্থার জন্য শুকনো খাবার, জল ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুছিয়ে রাখা এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। উপকূলীয় এলাকার মানুষের জন্য এই প্রস্তুতি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের সবার সচেতন হওয়া প্রয়োজন। শুধু দুর্যোগের সময় নয়, নিয়মিতভাবে পরিবেশ-বান্ধব অভ্যাস গড়ে তোলা, গাছ লাগানো এবং কার্বন নিঃসরণ কমাতে অবদান রাখা দীর্ঘমেয়াদে আমাদের সুরক্ষা দেবে। বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংস্থা বা দুর্যোগ প্রস্তুতিতে সহায়তা করে এমন প্রতিষ্ঠানে আপনার ছোট অবদানও অনেক মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে।

আগামী দিনগুলোতে আবহাওয়ার খবর সম্পর্কে আপডেট থাকতে আমাদের ফলো করুন। জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সুরক্ষায় আপনার কি কোনো পরামর্শ আছে? নিচে কমেন্ট করে জানান। দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে কোন জিনিসগুলো জরুরি বলে আপনি মনে করেন?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ