বিশিষ্ট পরিবেশকর্মী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বাংলাদেশে পরিবেশবিদ এবং সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান দূরত্বের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, এটি দেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই বিভাজন বায়ু, পানি ও জীববৈচিত্র্যের ওপর ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে থাকা দেশের নাজুক পরিবেশ সুরক্ষার প্রচেষ্টাকে বিপন্ন করতে পারে। পরিবেশ নিয়ে সরকারের দুর্বলতা
উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে প্রকৃতি নয়:
আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস উপলক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তর আয়োজিত এক পরামর্শ কর্মশালায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলোতে প্রকৃতিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জরুরি প্রয়োজনের ওপর জোর দেন। পরিবেশ নিয়ে সরকারের দুর্বলতা
তিনি বলেন, “আমরা যদি উন্নয়নকে প্রকৃতির কেন্দ্রবিন্দুতে না রাখি, তাহলে এগোতে পারব না। পরিবেশবিদদের সঙ্গে সরকারি সংস্থাগুলোর দূরত্ব দিনে দিনে বাড়ছে। অনেক সময় প্রকল্প অনুমোদনের সময় পরিবেশগত দিকগুলো উপেক্ষা করা হয়।”
রিজওয়ানা হাসান পরিবেশকে পরবর্তীতে ভাবার বিষয় হিসেবে দেখার প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে।” পরিবেশ নিয়ে সরকারের দুর্বলতা
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জরুরি:
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরিবেশ অধিদপ্তরকে সব পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন (ইআইএ) প্রতিবেদন সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার নির্দেশনা দেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “জানার অধিকার জনগণের আছে। অভিযোগের জবাব দেওয়া দয়া নয়—এটা আমাদের দায়িত্ব। আমাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, প্রকৃত টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রকৃতির সঙ্গে সত্যিকারের সম্প্রীতি জরুরি। “পরিবেশ সুরক্ষাকে শুধুমাত্র সবুজ প্রলেপ দেওয়া বা কোনো প্রকল্পকে পরিবেশবান্ধব দেখানোর জন্য রুটিন কাজ হিসেবে দেখলে টেকসই উন্নয়ন অর্জিত হবে না,” তিনি সতর্ক করেন।
জনগণের অংশগ্রহণ এবং ন্যায়বিচারের সুযোগ:
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান টেকসই উন্নয়ন অর্জনের জন্য জনগণের অংশগ্রহণ, তথ্য পাওয়ার অধিকার এবং ন্যায়বিচারের সুযোগের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, “টেকসই উন্নয়নের জন্য শুধু চেকলিস্ট পূরণ করাই যথেষ্ট নয়। পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন প্রতিবেদনগুলো যদি সহজ ভাষায় লেখা না হয় বা জনসাধারণের সঙ্গে শেয়ার করা না হয়, তাহলে সেগুলোর কোনো কার্যকারিতা থাকে না। শুধু জনমত শোনা যথেষ্ট নয়—তা অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, পরিবেশ সুরক্ষার দায়িত্ব শুধুমাত্র একটি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। “সব মন্ত্রণালয়কে এই দায়িত্ব নিতে হবে,” তিনি ঘোষণা করেন। “প্রশাসনিক সমন্বয় ও সংস্কার ছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণ সম্ভব নয়।”
সরকারের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন:
“প্রকৃতির সঙ্গে সম্প্রীতি ও টেকসই উন্নয়ন” শীর্ষক পরামর্শ কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান। অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ) ড. ফাহমিদা খানম, ইউএনডিপি বাংলাদেশের উপ-আবাসিক প্রতিনিধি সোনালি দয়ারত্নে, বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী রেজা খান এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. মো. সোহরাব আলী।
কর্মশালায় পরিবেশবিদ, নীতিনির্ধারক, শিক্ষাবিদ এবং উন্নয়ন সহযোগীরা একত্রিত হয়ে প্রকৃতির সঙ্গে সম্প্রীতির মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও টেকসই উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
জরুরি ভিত্তিতে সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা:
পরিবেশবিদ এবং সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান দূরত্ব দেশের পরিবেশগত ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুতর হুমকি। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার জন্য স্বচ্ছতা, জনগণের অংশগ্রহণ এবং সরকারের সম্মিলিত অঙ্গীকারের ওপর জোর দিয়ে একটি আরও সহযোগী পদ্ধতি অবলম্বন করা জরুরি।
আপনার মতামত কি? উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে পরিবেশগত উদ্বেগের বিষয়গুলো পর্যাপ্তভাবে বিবেচনা করা হয় বলে আপনি মনে করেন? নিচের মন্তব্য বিভাগে আপনার মতামত জানান।