বর্ষাকাল মানেই বাঙালির জীবনে স্বস্তি আর শান্তির বার্তা। গ্রীষ্মের দাবদাহের পর এক পশলা বৃষ্টি যেন প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। কিন্তু এবার বর্ষা এসেছে একটু আগেভাগেই। সাধারণত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তবে এবার প্রায় ১৬ বছর পর মে মাসের মাঝামাঝি সময়েই এর আগমন ঘটেছে। এই সময়ের আগে আসা কি কোনো বিপদ সংকেত? জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এর সম্ভাব্য প্রভাবগুলো কী হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করা যাক। ডুবতে চলেছে বাংলাদেশ
মৌসুমি বায়ুর আগমন: কেন এত আগে?
মৌসুমি বায়ু সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়ে আসা-যাওয়া করে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই স্বাভাবিক নিয়মে বেশ পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, সমুদ্রের তাপমাত্রা পরিবর্তন এবং বায়ুমণ্ডলের নানা ধরনের অসঙ্গতির কারণে এমনটা হচ্ছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বায়ুমণ্ডলের চাপ এবং বায়ুপ্রবাহের দিক পরিবর্তিত হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকায় মৌসুমি বায়ু দ্রুত শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এল নিনো ও লা নিনা’র মতো প্রাকৃতিক ঘটনাও মৌসুমি বায়ুর গতিপথ এবং সময়কে প্রভাবিত করে। ডুবতে চলেছে বাংলাদেশ
আগে বর্ষা আসার ফল কী হতে পারে?
মৌসুমি বায়ু আগে এলে একদিকে যেমন কিছু সুবিধা হতে পারে, তেমনি বেশ কিছু ঝুঁকির আশঙ্কাও রয়েছে। কৃষিতে এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে। একদিকে আগাম বর্ষা কৃষকদের জন্য কিছুটা স্বস্তি আনতে পারে। বিশেষ করে যারা বোরো ধান চাষ করেন, তারা সময়মতো ধান কাটতে পারলে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে পারেন। অন্যদিকে, অতিবৃষ্টি বা অসময়ের বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আগে বর্ষা এলে নদ-নদীর পানি বেড়ে গিয়ে আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হতে পারে। পাহাড়ী অঞ্চলে অতিবৃষ্টির কারণে ভূমিধসের সম্ভাবনা বেড়ে যায়, এবং ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়।
জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ:
বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা, খরা এবং বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই আছে। এর মধ্যে মৌসুমি বায়ুর এই অস্বাভাবিক আচরণ নতুন বিপদ ডেকে আনতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের কৃষি খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অসময়ের বৃষ্টি, খরা, এবং লবণাক্ততার কারণে ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে। বন্যা এবং জলাবদ্ধতার কারণে বিভিন্ন ধরনের রোগ যেমন ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড ইত্যাদি ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ক্ষতি হয়। ডুবতে চলেছে বাংলাদেশ
আমাদের করণীয়:
জলবায়ু পরিবর্তনের এই কঠিন বাস্তবতাকে মোকাবিলা করতে হলে আমাদের কিছু জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমাতে হবে। বেশি করে গাছ লাগাতে হবে, যাতে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং ভূমিধসের মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে হবে। পানি সংরক্ষণের জন্য জলাধার তৈরি করতে হবে এবং বৃষ্টির পানি ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে এবং পরিবেশ সুরক্ষায় উৎসাহিত করতে হবে।
মৌসুমি বায়ুর এই অস্বাভাবিক আগমন আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। সময় এসেছে পরিবেশের প্রতি আরও বেশি যত্নশীল হওয়ার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার।
আপনার মতামত জানান:
মৌসুমি বায়ুর এই পরিবর্তন নিয়ে আপনার কী মনে হয়? আপনি কি কোনো অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেছেন? নিচে কমেন্ট করে আপনার অভিজ্ঞতা জানান। আসুন, সবাই মিলে পরিবেশ সুরক্ষায় এগিয়ে আসি।