চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নতুন কোনো বিষয় নয়। বর্ষাকাল এলেই নগরবাসীর জীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। কিন্তু এই সমস্যার সমাধানে কেন এত দীর্ঘসূত্রিতা? সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন জানিয়েছেন, প্রায় ৩০০ কোটি টাকার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে জলাবদ্ধতা নিরসন করা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে একদিকে যেমন নাগরিক জীবন বিপর্যস্ত, অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাড়ছে পরিবেশগত ঝুঁকি। ৩০০ কোটি টাকার অভাব
যন্ত্রাংশের অভাব: মেয়রের হতাশা
শনিবার (২৪ মে) চসিকের সম্মেলন কক্ষে ‘চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন এই উদ্বেগের কথা জানান। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন কাজে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সরকারের সদিচ্ছার অভাবে নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে না। ৩০০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ক্রয়ে বাজেট বরাদ্দ না পাওয়ায় তিনি হতাশা প্রকাশ করেন। ৩০০ কোটি টাকার অভাব
বৈষম্যমূলক বাজেট বরাদ্দ:
মেয়র আরও উল্লেখ করেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামে জনসংখ্যার অনুপাতে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয় না। অথচ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সবকিছু নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু চট্টগ্রামকে দেওয়ার বেলায় বৈষম্য করা হয়। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তিনি ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ জলাবদ্ধতা নিরসন করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা:
জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রতিবন্ধকতাগুলো গণমাধ্যমে তুলে ধরার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, কোনো কিছু লুকানোর প্রয়োজন নেই। মেয়রকে খুশি করার জন্য তথ্য গোপন করলে সমস্যার সমাধান করা যাবে না। তাই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রকৃত সমস্যা তুলে ধরুন। গণমাধ্যমের রিপোর্টে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে। ৩০০ কোটি টাকার অভাব
আলোচনায় যা উঠে এসেছে:
বাংলাদেশ জনসংযোগ সমিতি চট্টগ্রাম শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দেশ রূপান্তরের ব্যুরো প্রধান ভূঁইয়া নজরুল। অনুষ্ঠানে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের উপাচার্য প্রফেসর এস. এম. নছরুল কদির, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব ও সিডিএ বোর্ড মেম্বার জাহিদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও বাসসের ব্যুরো চিফ মোহাম্মদ শাহনওয়াজ, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা, জনসংযোগ সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি এ. এস. এম. বজলুল হকসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।
সেমিনারে বক্তারা চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে পাহাড়কাটা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় সরকারি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেখানে বাটারফ্লাই পার্কের মতো বিভিন্ন পার্ক তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। এছাড়া অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং আবর্জনাকে সম্পদে পরিণত করার ওপর জোর দেওয়া হয়। তরুণদের ক্লাব কালচারের মাধ্যমে কাজে লাগানোর কথাও বলা হয়।
জলাবদ্ধতা ও জলবায়ু পরিবর্তন:
চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা শুধু একটি স্থানীয় সমস্যা নয়, এটি জলবায়ু পরিবর্তনের একটি বড় উদাহরণ। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে এই সমস্যা আরও বাড়ছে। জলাবদ্ধতার কারণে একদিকে যেমন মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশের ওপর পড়ছে মারাত্মক প্রভাব।
- দূষিত পানি ছড়িয়ে পড়ার কারণে বাড়ছে রোগবালাই।
- কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে।
- যানবাহন চলাচল ব্যাহত হওয়ায় অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে।
- জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শহরের অবকাঠামো।
এখন কী করা উচিত?
চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে জরুরি ভিত্তিতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন:
- অবিলম্বে ৩০০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতির বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করা।
- পাহাড় কাটা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ ও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা।
- আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু করা এবং বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মতো প্রকল্প গ্রহণ করা।
- খাল ও নালাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা।
- জলাবদ্ধতা নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা।
চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন করা গেলে একদিকে যেমন নগরবাসীর জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে, অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা করা সহজ হবে। তাই এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
আপনার মতামত জানান:
চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কী? এই সমস্যার সমাধানে আপনার কোনো প্রস্তাব থাকলে নিচে কমেন্ট করে জানান। আসুন, সবাই মিলে এই শহরের পরিবেশ সুরক্ষায় এগিয়ে আসি।