27.5 C
Bangladesh
বৃহস্পতিবার, মে ২৯, ২০২৫
spot_img

৩০ কোটি জলে! বুড়িগঙ্গার অভিশাপ কি পিছু ছাড়বে না?

ঢাকা শহরের প্রাণ বুড়িগঙ্গা, আর তার এক সময়ের শাখা আদি বুড়িগঙ্গা। এককালে এই চ্যানেল ছিল জীবনরেখা, বয়ে যেত বাণিজ্য আর মানুষের আনাগোনা। কিন্তু কালের বিবর্তনে, শহরের বিষাক্ত নিঃশ্বাসে আজ সে মৃতপ্রায়। একরাশ স্বপ্ন আর ৩০ কোটি টাকা খরচ করে আদি বুড়িগঙ্গাকে উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সেই চ্যানেল এখন যেন ময়লার ভাগাড়! ৩০ কোটি জলে

হাতিরঝিলের স্বপ্ন, ভাগাড়ের বাস্তবতা

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) হাতিরঝিলের মতো আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলটিকেও দৃষ্টিনন্দন করার এক বিশাল পরিকল্পনা হাতে নেয়। প্রায় ৩০ কোটি টাকা খরচ করে চ্যানেলটি খনন করা হয়, উদ্ধার করা হয় অবৈধ দখল থেকে। কিন্তু এই উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়েছে। মাত্র দেড় বছরের মধ্যেই আদি বুড়িগঙ্গা তার পুরনো চেহারায় ফিরে গেছে – কচুরিপানা, আবর্জনা আর দুর্গন্ধে ভরপুর। ৩০ কোটি জলে

কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা শামসুল আলমের কথায় উঠে আসে হতাশার সুর, “সিটি করপোরেশন মাটি তুলে কিছু কাজ করেছিল। আমরা ভেবেছিলাম এবার জায়গাটা বদলে যাবে; কিন্তু এখন আগের চেয়েও খারাপ অবস্থা। শুধু টাকা খরচ হয়েছে, সুফল কিছু নেই।”

কোথায় গলদ?

ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রকৌশলীরা বলছেন, যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা বন্ধ করা না গেলে শতকোটি টাকা খরচ করেও কোনো লাভ হবে না। তাদের মতে, শহরের দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কাঠামোর কারণেই খননের সুফল ধরে রাখা যায়নি। এটা যেন অনেকটা “হাতি কাদায় পড়লে চামচিকাও লাথি মারে” – তেমন একটা অবস্থা।

আদি বুড়িগঙ্গা একসময় বুড়িগঙ্গা নদীর গুরুত্বপূর্ণ শাখা ছিল। শহরের সম্প্রসারণ, দখল আর দূষণের কারণে চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৭ সালে এটি উদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও, কাজ শুরু হয় ২০২২ সালে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার খনন ও দখলমুক্ত করতে খরচ হয় প্রায় ৩০ কোটি টাকা। তখন বলা হয়েছিল, এখানে তৈরি হবে নান্দনিক বসার স্থান, করা হবে সবুজায়ন। কিন্তু সেসব এখন শুধুই স্মৃতি।

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান অবশ্য বলছেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে এই চ্যানেল পর্যন্ত পানিপ্রবাহ ঠিক রাখতে তারা কাজ করছেন। কিন্তু বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। চ্যানেলের বেশিরভাগ অংশ কচুরিপানায় ভর্তি, পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে, আর চারপাশে ফেলা হচ্ছে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা। ৩০ কোটি জলে

উন্নয়ন পরিকল্পনা, নাকি চোখের ধুলো?

আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলের অবস্থান লালবাগের ইসলামবাগ, হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গীরচর এলাকায়। চ্যানেলটি সচল থাকলে লালবাগ, হাজারীবাগ, ধানমন্ডি ও কামরাঙ্গীরচরের জলাবদ্ধতা কমবে, এমনটাই আশা ছিল। একসময় মৃতপ্রায় চ্যানেলটিকে হাতিরঝিলের আদলে সাজানোর পরিকল্পনাও ছিল। তবে এখন সেই পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখছে না।

প্রশ্ন জাগে, যদি দেড় বছরের মধ্যে ৩০ কোটি টাকার খননকাজের সুফল হারিয়ে যায়, তাহলে টেকসই উন্নয়ন কীভাবে সম্ভব? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি এর রক্ষণাবেক্ষণ এবং জনগণের সচেতনতা জরুরি। শুধু খাতায়-কলমে উন্নয়ন করলে আসলে কোনো লাভ নেই।

ডিএসসিসির কর্মকর্তারা বলছেন, নজরদারির অভাবে চ্যানেলটি আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য এই চ্যানেলটিকে সচল রাখা জরুরি।

পরিবেশের কান্না, নাকি আমাদের ব্যর্থতা?

আদি বুড়িগঙ্গার এই করুণ পরিণতি শুধু একটি চ্যানেলের গল্প নয়, এটি আমাদের পরিবেশ সচেতনতার অভাবের প্রতিচ্ছবি। অপরিকল্পিত নগরায়ন, দূষণ আর উদাসীনতা আমাদের পরিবেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

৩০ কোটি টাকা খরচ করে একটি চ্যানেলকে পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু সাধারণ মানুষের সচেতনতা এবং সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এটা কি শুধু টাকার অপচয়, নাকি পরিবেশের প্রতি আমাদের চরম অবহেলার প্রমাণ?

আসুন, আমরা সবাই মিলে পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসি। যত্রতত্র ময়লা ফেলা বন্ধ করি, পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতন হই। কারণ, পরিবেশ বাঁচলে আমরা বাঁচব।

এবার আপনার পালা:
  1. আদি বুড়িগঙ্গার এই পরিণতি নিয়ে আপনার কী মতামত?
  2. কীভাবে আমরা আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করতে পারি?
  3. আপনার এলাকায় পরিবেশ সুরক্ষায় কী কী উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে?

কমেন্ট করে জানান আপনার ভাবনা। একসাথে কাজ করলেই আমরা আমাদের পরিবেশকে বাঁচাতে পারব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ