সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বাবু ইসলাম (৩০) নামের এক যুবক সরকারি সড়কের পাশে থাকা ১৭টি গাছ কেটে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে এবং এলাকার পরিবেশ সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। জানা যায়, সোমবার সকালে উপজেলার বাঙ্গালা ইউনিয়নের কুচিয়ামারা-প্রতাপ সড়কের পাশের গাছগুলো কেটে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয়। অভিযুক্ত বাবু ইসলামের দাবি, তিনি তার নিজের সীমানার গাছ কেটেছেন। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, তিনি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সরকারি গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এই ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন তদন্ত শুরু করেছে। সিরাজগঞ্জে গাছ কেটে ক্ষমতার দাপট
ঘটনার বিবরণ: গাছ কাটা ও স্থানীয়দের প্রতিরোধ
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, বাবু ইসলাম কুচিয়ামারা-প্রতাপ সড়কের পাশে থাকা ইউক্যালিপটাসসহ ১৭টি গাছ কাটতে শুরু করেন। এলাকার লোকজন বাধা দিতে গেলে তিনি পেশিশক্তির ভয় দেখান এবং গাছগুলো কেটে পাশের প্রতাববাজারে কাঠ ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেন। অভিযোগ রয়েছে, সরকারের কোনো অনুমতি ছাড়াই বাবু ইসলাম সড়কের গাছগুলো কেটে বিক্রি করেছেন, যেগুলোর আনুমানিক মূল্য ২ লক্ষ টাকা। স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, এর আগেও দুর্বৃত্তরা এই সড়ক থেকে বেশ কিছু গাছ কেটে বিক্রি করেছে। সিরাজগঞ্জে গাছ কেটে ক্ষমতার দাপট
প্রশাসনের তৎপরতা: তদন্ত শুরু
স্থানীয়দের কাছ থেকে মৌখিক অভিযোগ পেয়ে উপজেলা প্রশাসন দ্রুত তদন্ত শুরু করেছে। বাঙ্গালা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আবদুল কাইয়ুম জানান, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সেখানে ১৭টি গাছ কাটার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।’
অভিযুক্তের বক্তব্য: “আমি কোনো আইন মানি না”
এ বিষয়ে অভিযুক্ত বাবু ইসলাম বলেন, ‘আমার সীমানার গাছ আমি কেটেছি। তাতে কার কী বলার আছে? এ বিষয়ে আমি কোনো আইন মানি না।’ তার এই বক্তব্যে পরিবেশ আইন ও স্থানীয়দের প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রকাশ পায়।
পরিবেশের ওপর প্রভাব: গাছের গুরুত্ব
১৭টি গাছ কাটা আপাতদৃষ্টিতে ছোট ঘটনা মনে হলেও, এর পরিবেশগত প্রভাব অনেক গভীর। গাছ কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে জলবায়ু পরিবর্তনে বাধা দেয়, ছায়া প্রদান করে, ভূমিক্ষয় কমায় এবং স্থানীয় জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে। গাছগুলো কেটে ফেলার কারণে একদিকে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হয়েছে, তেমনই অন্যদিকে সরকারের সম্পদও নষ্ট হয়েছে।
উত্থাপিত প্রশ্ন: উদাসীনতা নাকি যোগসাজশ?
এই ঘটনা সিরাজগঞ্জ এলাকায় পরিবেশ সুরক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। কী করে একজন ব্যক্তি জনসম্মুখে এতগুলো গাছ কেটে বিক্রি করে দিলেন, অথচ স্থানীয় প্রশাসন বা বন বিভাগের কেউ জানতে পারল না? স্থানীয় জনগণের মধ্যে কি গাছের গুরুত্ব এবং এগুলোর সুরক্ষা নিয়ে কোনো সচেতনতা নেই? নাকি এর পেছনে দুর্নীতি বা যোগসাজশের মতো কোনো বিষয় কাজ করছে?
পূর্বের ঘটনা এবং স্থানীয় উদ্বেগ
স্থানীয়দের দাবি, এর আগেও এই সড়কে গাছ কাটার ঘটনা ঘটেছে। এর মানে হল, এই ধরনের অপরাধ প্রায়ই ঘটছে এবং অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
আইনের শাসন ও স্থানীয় সচেতনতা জরুরি
এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। একইসঙ্গে, স্থানীয় জনগণের মধ্যে পরিবেশ সুরক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে। গাছ কাটা এবং পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি, পরিবেশ সুরক্ষায় স্থানীয় জনসাধারণকে আরও বেশি সম্পৃক্ত করতে হবে। অন্যথায়, এমন ঘটনা ভবিষ্যতে আরও ঘটতে পারে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। পরিবেশ রক্ষা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, বরং প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য। আসুন, সবাই মিলে পরিবেশ সুরক্ষায় এগিয়ে আসি এবং সবুজ বাংলাদেশ গড়ি।
কল টু অ্যাকশন:
- এই ঘটনার প্রতিবাদ জানান এবং আপনার মতামত কমেন্ট করুন।
- এই সংবাদটি শেয়ার করে অন্যদেরকেও সচেতন করুন।
- আপনার এলাকায় পরিবেশ সুরক্ষার জন্য কী করা যায়, সে বিষয়ে আমাদের জানান।