25.4 C
Bangladesh
শুক্রবার, মে ৩০, ২০২৫
spot_img

বালু-পাথর খেকোদের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় সাংবাদিকরা আক্রান্ত, আসল ঘটনা কী?

পরিবেশগত সমস্যা নিয়ে প্রতিবেদন করতে গিয়ে সাংবাদিকদের ঝুঁকির মুখে পড়ার একটি উদ্বেগজনক ঘটনায়, শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন নিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে প্রশ্ন করার পর একদল সাংবাদিকের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার দাওধারা-কাটাবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বালু-পাথর খেকোদের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় সাংবাদিকরা আক্রান্ত

ঘটনাটি ঘটে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের শেরপুর সফরকালে। তিনি দাওধারা-কাটাবাড়ি এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন, যেখানে সরকার একটি পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। তবে বন বিভাগ এর বিরোধিতা করছে, কারণ জায়গাটি হাতির চলাচলের পথ এবং এটি সামাজিক বনায়ন অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত।

এলাকা পরিদর্শনের পর সাংবাদিকরা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের কাছে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন এবং বনের মধ্যে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে তার অবস্থান জানতে চান। অভিযোগ উঠেছে, এই প্রশ্ন শুনে সেখানে উপস্থিত কিছু লোক ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। বালু-পাথর খেকোদের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় সাংবাদিকরা আক্রান্ত

অভিযোগ অনুযায়ী, উপদেষ্টা স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। এরপর তার গাড়িবহর সেখান থেকে চলে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা সাংবাদিকদের ঘিরে ধরে কিল-ঘুষি মারতে থাকে।

আহত সাংবাদিকরা হলেন একাত্তর টিভির জাহিদুল খান, বাংলা টিভির নাঈম ইসলাম, সময় টিভির ক্যামেরাম্যান বাবু চক্রবর্তী এবং বাংলাদেশ খবরের শাহরিয়ার শাকির। তারা সবাই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

শেরপুর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “সাংবাদিকরা তাদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন। আমরা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”

নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা জানান, তিনি উপদেষ্টার গাড়ির সঙ্গে ছিলেন এবং পেছনে গোলমালের শব্দ শুনতে পেয়েছেন। তিনি বলেন, পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছে এবং অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মূল সমস্যা: পরিবেশ সুরক্ষার সংগ্রাম

এই ঘটনা অবৈধ সম্পদ উত্তোলন এবং এর পরিবেশগত প্রভাবের বিরুদ্ধে চলমান সংগ্রামকে তুলে ধরে। বালু ও পাথর উত্তোলনের ফলে প্রায়ই নদী ভাঙন, বন উজাড় এবং স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি হয়। এই কার্যক্রম জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে আরও বাড়িয়ে দেয়, জীববৈচিত্র্য হ্রাস করে এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রাকে হুমকির মুখে ফেলে।

প্রস্তাবিত পর্যটন কেন্দ্রের স্থানটিও একটি জটিলতা তৈরি করেছে। হাতির করিডোরে নির্মাণ শুধু প্রাণীদের বিপন্ন করে না, বনের বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্যকেও নষ্ট করে।

কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ: পরিবেশ রক্ষায় সাংবাদিকদের ভূমিকা

সাংবাদিকরা এই বিষয়গুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পরিবেশগত অবক্ষয় নিয়ে অনুসন্ধান ও প্রতিবেদন করার মাধ্যমে তারা সচেতনতা বাড়ান, অপরাধীদের জবাবদিহি করেন এবং নাগরিকদের পরিবর্তনের জন্য দাবি জানাতে উৎসাহিত করেন। এই হামলা তাদের জন্য একটি কঠোর বার্তা, যারা ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের অপকর্মের বিরুদ্ধে কথা বলতে এবং পরিবেশের ক্ষতি প্রকাশ করতে সাহস দেখান।

সাংবাদিকদের ওপর হামলা শুধু কয়েকজন ব্যক্তির ওপর আক্রমণ নয়, এটি বাক স্বাধীনতা এবং তথ্যের অধিকারের ওপর হামলা। একটি সুস্থ ও টেকসই সমাজের জন্য এই দুইটি বিষয় খুবই জরুরি।

আপনি কী করতে পারেন?

এই ঘটনা পরিবেশ সচেতনতা এবং সুরক্ষার জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়। আপনি কয়েকটি উপায়ে অবদান রাখতে পারেন:

  1. সচেতন থাকুন: বাংলাদেশের পরিবেশগত সমস্যা নিয়ে প্রতিবেদন করা সংবাদমাধ্যম এবং সংস্থাগুলোর খবর অনুসরণ করুন।
  2. স্বতন্ত্র সাংবাদিকতাকে সমর্থন করুন: যে সংবাদ প্রকাশনাগুলি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে অগ্রাধিকার দেয় এবং ক্ষমতাশালীদের জবাবদিহি করে, সেগুলিতে সদস্য হোন।
  3. জবাবদিহিতা দাবি করুন: আপনার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন এবং অবৈধ খনন ও পরিবেশগত অবনতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তাদের অনুরোধ করুন।
  4. সচেতনতা ছড়িয়ে দিন: এই নিবন্ধটি এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে আপনার বন্ধু এবং পরিবারের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করুন।

একটি সুস্থ পরিবেশ এবং স্থিতিশীল জলবায়ুর জন্য প্রতিটি নাগরিকের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। আসুন, আমরা সেই সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়াই, যারা আমাদের সত্য জানানোর জন্য নিজেদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলেন এবং আমাদের গ্রহকে রক্ষা করার জন্য একসঙ্গে কাজ করি।

এই ঘটনা নিয়ে আপনার মতামত কী? নিচে মন্তব্য করুন এবং আমরা কীভাবে আমাদের পরিবেশ রক্ষা করতে পারি এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারি সে বিষয়ে আলোচনা শুরু করি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ