মঙ্গলবার গভীর রাতে ঘুম ভেঙে গেল অনেকের। ঢাকাসহ আশেপাশের এলাকায় অনুভূত হল মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প। ভারতের মণিপুরের কাছে এর উৎপত্তিস্থল হলেও, কম্পন অনুভূত হয়েছে বাংলাদেশেও। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি, তবে এই ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দিল প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে। ঘুমন্ত শহরে ভূমিকম্প
ভূমিকম্পের মাত্রা ও উৎপত্তিস্থল:
ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরি বিষয়ক ওয়েবসাইট ভলকানো ডিসকভারি জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫.২। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের মণিপুর রাজ্যের ইম্ফল থেকে ৩৯ কিলোমিটার দূরে। ভূমিকম্পটি আঘাত হানে বুধবার (২৮ মে) মধ্যরাত ১টা ৫৪ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ২টা ২৪মিনিট)। উৎপত্তিস্থলের গভীরতা ছিল ৪৭ কিলোমিটার। ঘুমন্ত শহরে ভূমিকম্প
কম গভীরতায় ভূমিকম্প হওয়ায় এর কম্পন বিস্তৃত এলাকাজুড়ে অনুভূত হয়েছে। তবে, যেহেতু গভীরতা কম ছিল, তাই ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও বেশি ছিল।
ভূমিকম্প কেন হয়? জলবায়ু পরিবর্তনের ভূমিকা:
ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। পৃথিবীর অভ্যন্তরের টেকটোনিক প্লেটের স্থানান্তরের কারণে সাধারণত ভূমিকম্প হয়ে থাকে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও কি ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ছে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি প্রভাবে ভূমিকম্প হয় না। তবে, এর কিছু পরোক্ষ প্রভাব থাকতে পারে। ঘুমন্ত শহরে ভূমিকম্প
- বরফ গলন: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মেরু অঞ্চলের বরফ গলছে। বরফ গলে যাওয়ায় ভূপৃষ্ঠের ওপরের চাপ কমে যায়। এর ফলে টেকটোনিক প্লেটগুলোর ওপর প্রভাব পড়তে পারে।
- বৃষ্টিপাতের পরিবর্তন: অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত অথবা খরার কারণে ভূমিধসের ঘটনা বাড়তে পারে। ভূমিধসের কারণেও ভূ-অভ্যন্তরে চাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা ভূমিকম্পের কারণ হতে পারে।
- সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি: সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়লে উপকূলীয় অঞ্চলে ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়ে। এর ফলে ভূমিকম্পের সম্ভাবনাও বাড়তে পারে।
যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভূমিকম্পের সরাসরি কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি, তবুও বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এর পরোক্ষ প্রভাবগুলি খতিয়ে দেখা দরকার।
বাংলাদেশের ঝুঁকি:
ভূমিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে প্রায়ই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। বড় ধরনের ভূমিকম্পের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া তাই খুবই জরুরি।
করণীয়:
- ভূমিকম্পের সময় শান্ত থাকুন এবং আতঙ্কিত হবেন না।
- ঘরের ভেতরে থাকলে টেবিলের নিচে আশ্রয় নিন অথবা দেয়ালের কাছাকাছি থাকুন।
- বাইরে থাকলে খোলা জায়গায় যান।
- ভূমিকম্পের পরে গ্যাস ও বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করে দিন।
- আহতদের সাহায্য করুন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন, তবে সচেতন থাকলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো সম্ভব। আসুন, সবাই মিলে পরিবেশ সুরক্ষায় কাজ করি, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কমাই।
আপনার এলাকার অভিজ্ঞতা কমেন্ট করে জানান।