কুরবানির ঈদ মানেই আনন্দ, উৎসব। কিন্তু এই আনন্দের মাঝে পরিবেশ দূষণের একটা চিন্তা সবসময় থাকে। যত্রতত্র পশুর বর্জ্য ফেলায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়, যা জলবায়ু পরিবর্তনের ওপরও প্রভাব ফেলে। তবে এবার আর চিন্তা নেই! কারণ, পরিবেশ সুরক্ষায় এগিয়ে এসেছে দেশের সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলো। ঈদে পরিবেশ বাঁচান
ফ্রি-তে মিলবে পরিবেশবান্ধব ব্যাগ: পরিবেশ সুরক্ষার নতুন পদক্ষেপ
কুরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণের জন্য দেশের সকল সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা বিনামূল্যে পরিবেশসম্মত ব্যাগ সরবরাহ করবে। শুধু তাই নয়, পশুর হাটগুলোতেও থাকবে বিশেষ নজরদারি। স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রতিটি হাটে স্থাপন করা হবে মনিটরিং সেল। এই উদ্যোগ পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ঈদে পরিবেশ বাঁচান
গত ১৫ মে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদের সভাপতিত্বে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কুরবানির বর্জ্য ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তার মানে, ঈদের দিন থেকেই শহর থাকবে পরিচ্ছন্ন!
সচেতনতা বাড়াতে প্রচারপত্র: পরিবেশের জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা
ঈদের সময় কুরবানির বর্জ্য কিভাবে পরিবেশসম্মতভাবে অপসারণ করা যায়, সেই বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে প্রচারপত্র বিলি করা হবে। দেশের সকল সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় এই প্রচারপত্র বিতরণ করা হবে। প্রায় চার লাখ প্রচারপত্র ছাপানো হবে।
শুধু তাই নয়, ঈদের আগের জুম্মার খুতবা ও ঈদের নামাজের সময়ও এই বিষয়ে আলোচনা করা হবে, যাতে সবাই নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি দেয় এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সচেতন থাকে। ঈদে পরিবেশ বাঁচান
গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় স্থানীয় হাট-বাজার ও উন্মুক্ত এলাকায় পরিবেশ দূষণ রোধকল্পে প্রচারপত্র বিতরণ করা হবে।
কেন এই উদ্যোগ? পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর প্রভাব
কুরবানির পশুর বর্জ্য যেখানে সেখানে ফেললে তা থেকে নানা ধরনের রোগ ছড়াতে পারে। তাছাড়া, বর্জ্য পচে দুর্গন্ধ ছড়ায়, যা পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এর পরিবেশগত প্রভাব সুদূরপ্রসারী:
- মাটি দূষণ: পশুর বর্জ্য মাটিতে মিশে মাটির উর্বরতা কমিয়ে দেয় এবং মাটির স্বাভাবিক গঠন নষ্ট করে। এর ফলে গাছপালা ও অন্যান্য উদ্ভিদের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়ে।
- পানি দূষণ: বর্জ্য থেকে নির্গত তরল পদার্থ জলাশয়ে মিশে পানি দূষিত করে। এই দূষিত পানি ব্যবহারের ফলে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে।
- বায়ু দূষণ: পচা বর্জ্য থেকে অ্যামোনিয়া ও মিথেন গ্যাসের মতো ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত হয়, যা বায়ু দূষণ করে এবং শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে।
- জীবাণু বিস্তার: পশুর বর্জ্য বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর breeding ground হিসেবে কাজ করে। এর মাধ্যমে রোগ খুব সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
অন্যদিকে, পশুর বর্জ্য যদি সঠিকভাবে অপসারণ করা যায়, তাহলে পরিবেশের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব কমানো সম্ভব। পরিবেশবান্ধব ব্যাগ ব্যবহার করলে বর্জ্য সহজে এক জায়গায় জড়ো করে নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যাওয়া যায়।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে পরিবেশ সুরক্ষার এই উদ্যোগ খুবই জরুরি। কারণ, পরিবেশ দূষণ জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ। কার্বন নিঃসরণ কমাতে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অপরিহার্য।
আসুন, সবাই মিলে এই উদ্যোগকে সফল করি। পরিবেশকে রাখি পরিচ্ছন্ন, সুস্থ থাকি আমরা সবাই।
করণীয়:
- কুরবানির পশু জবাই করার জন্য নির্দিষ্ট স্থান বেছে নিন।
- পশু জবাইয়ের পর রক্ত ও অন্যান্য বর্জ্য একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখুন।
- সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার দেওয়া পরিবেশবান্ধব ব্যাগ ব্যবহার করুন।
- ব্যাগটি ভরে গেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দিন।
- অন্যদেরকেও এই বিষয়ে উৎসাহিত করুন।
- পশুর চামড়া যত্রতত্র না ফেলে চামড়া প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় দিন অথবা মাটি চাপা দিন।
আসুন, সবাই মিলে একটি পরিচ্ছন্ন ও সবুজ বাংলাদেশ গড়ি। আপনার মতামত কমেন্ট করে জানান।