25.4 C
Bangladesh
শুক্রবার, মে ৩০, ২০২৫
spot_img

বন বাঁচাতে মরিয়া সরকার! তুরস্কের অভিজ্ঞতাতেই কি বাঁচবে বাংলাদেশ?

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সম্প্রতি জানিয়েছেন, বাংলাদেশ বন পুনরুদ্ধার ও ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়নে তুরস্কের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে আগ্রহী। তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেনের সাথে এক সৌজন্য সাক্ষাতে তিনি এই আগ্রহ প্রকাশ করেন। এই আলোচনা বাংলাদেশের পরিবেশ সুরক্ষার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বিশ্লেষণ করা যাক। বন বাঁচাতে মরিয়া সরকার

আলোচনার প্রেক্ষাপট:

বৈঠকে রিজওয়ানা হাসান উপযুক্ত বৃক্ষ প্রজাতি রোপণ এবং প্রকৃতি-কেন্দ্রিক পর্যটন উন্নয়নে তুরস্কের কারিগরি সহায়তা চেয়েছেন। এছাড়া, হাতি-মানুষ দ্বন্দ্বপ্রবণ এলাকায় বন পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি। বনভূমি সংকোচন ও খাদ্যঘাটতির কারণে হাতির মৃত্যুর ঘটনাগুলো উল্লেখ করে টেকসই বন ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। অন্যদিকে, রাষ্ট্রদূত সেন জানান, তুরস্কের সহযোগিতা ও সমন্বয় সংস্থা টিকা (টিআইকেএ) ঢাকায় সক্রিয়ভাবে কাজ করছে এবং পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন খাতে মধ্যম পরিসরের প্রকল্পে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। বন বাঁচাতে মরিয়া সরকার

তুরস্কের বন পুনরুদ্ধার কার্যক্রম: একটি উদাহরণ:

তুরস্ক গত কয়েক দশকে বনভূমি পুনরুদ্ধার ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। দেশটির সরকার বনভূমি বৃদ্ধি, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পরিবেশবান্ধব পর্যটন উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তুরস্ক সরকার দেশব্যাপী ব্যাপক বনায়ন কর্মসূচি পরিচালনা করেছে, যার মাধ্যমে নতুন বনভূমি তৈরি এবং ক্ষতিগ্রস্ত বন পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। তুরস্ক টেকসই বন ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিয়েছে, যার ফলে বন থেকে কাঠ ও অন্যান্য সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব কমানো সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও, তুরস্ক সরকার পরিবেশবান্ধব পর্যটন উন্নয়নের মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছে, যার মাধ্যমে বনভূমি সংরক্ষণ এবং স্থানীয় জনগণের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তুরস্কের এই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান হতে পারে।

বাংলাদেশের বনভূমির বর্তমান চিত্র:

বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। এখানে বনভূমির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশের বনভূমি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সুন্দরবনের মতো ম্যানগ্রোভ বন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হুমকির মুখে। এছাড়া, বনভূমি উজাড় হওয়ার কারণে বন্যপ্রাণী তাদের আবাসস্থল হারাচ্ছে এবং মানুষ-বন্যপ্রাণী সংঘাত বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে বন পুনরুদ্ধার ও টেকসই বন ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

বাংলাদেশের জন্য তুরস্কের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা:

তুরস্কের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ উপকৃত হতে পারে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের পরিবেশ ও জলবায়ুর সাথে সঙ্গতি রেখে উপযুক্ত বৃক্ষ প্রজাতি নির্বাচন করা প্রয়োজন, এক্ষেত্রে তুরস্কের অভিজ্ঞতা কাজে আসতে পারে। বন ব্যবস্থাপনার আধুনিক কৌশল ব্যবহার করে তুরস্ক বনভূমি পুনরুদ্ধার করেছে, যা বাংলাদেশেও প্রয়োগ করা যেতে পারে। পরিবেশের ওপর কম প্রভাব ফেলে কিভাবে ইকো-ট্যুরিজম সাইট তৈরি করা যায়, সে বিষয়ে তুরস্কের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে। বনভূমি পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে বন্যপ্রাণীদের আবাসস্থল ফিরিয়ে দিয়ে মানুষ-বন্যপ্রাণী সংঘাত কমানো সম্ভব, এবং এক্ষেত্রে তুরস্কের অভিজ্ঞতা নতুন পথ দেখাতে পারে। বন বাঁচাতে মরিয়া সরকার

সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ:

এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য, তবে এর কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। প্রথমত, বন পুনরুদ্ধার একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া, যার জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, পর্যাপ্ত বিনিয়োগ এবং স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে ভূমি ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং বনভূমি দখলের প্রবণতা বন পুনরুদ্ধার কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তৃতীয়ত, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে পারলে তুরস্কের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ বন পুনরুদ্ধার ও পরিবেশ সুরক্ষায় নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারবে।

করণীয়:

সরকার ও স্থানীয় জনগণের মধ্যে সমন্বয় করে বন পুনরুদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। বনভূমি দখল রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। বন ব্যবস্থাপনার জন্য পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ করতে হবে এবং এ বিষয়ে গবেষণা ও প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে।

আসুন, সবাই মিলে পরিবেশ সুরক্ষায় এগিয়ে আসি। আপনার মতামত কমেন্ট করে জানান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ