কক্সবাজারের বেলা (বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি) আয়োজিত গণশুনানি যেন সোনাদিয়ার আর্তনাদ। বক্তারা সোচ্চার কণ্ঠে দাবি জানিয়েছেন, প্যারাবন ধ্বংস করে তৈরি হওয়া অবৈধ চিংড়িঘেরগুলো অবিলম্বে উচ্ছেদ করতে হবে। উপকূলের রক্ষাকবচ খ্যাত ম্যানগ্রোভ বা প্যারাবন যেভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে, তা বন্ধ না হলে সোনাদিয়ার মতো দ্বীপগুলোকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়বে। কিন্তু কেন এই উদ্বেগ? কী ঘটছে সোনাদিয়ায়? সোনাদিয়ায় সর্বনাশ
গণশুনানির প্রেক্ষাপট:
“উপকূলীয় বন সংরক্ষণ এবং পুনরুদ্ধার” শীর্ষক এই গণশুনানিতে বন, পরিবেশ, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বক্তারা সোনাদিয়ার পরিবেশগত বিপর্যয় এবং এর প্রতিকারের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। সোনাদিয়ায় সর্বনাশ
গণশুনানিতে উঠে আসে, সোনাদিয়ায় কয়েক হাজার একর প্যারাবন ধ্বংস করে ৪৪টি চিংড়িঘের নির্মাণ করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর অন্তত ৫৬ জন দখলদারের বিরুদ্ধে মামলা করলেও, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা যায়নি।
প্যারাবন কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
প্যারাবন শুধু উপকূলীয় অঞ্চলের সৌন্দর্য নয়, এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আমাদের রক্ষা করে। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলকে রক্ষা করার পাশাপাশি প্যারাবন ভূমি ক্ষয়রোধ করে, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে এবং কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সহায়তা করে।কিন্তু চিংড়িঘের ও লবণ উৎপাদনের মাঠ তৈরির নামে প্যারাবন ধ্বংসের কারণে উপকূলীয় অঞ্চল আজ হুমকির মুখে। সোনাদিয়ায় সর্বনাশ
সোনাদিয়ার বর্তমান চিত্র:
সোনাদিয়া একটি প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা। এখানে কয়েক হাজার একর প্যারাবন ধ্বংস করে চিংড়িঘের নির্মাণ করা হয়েছে। এর ফলে সামুদ্রিক ও বন্য প্রাণী এবং জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্যারাবন ধ্বংসের সময় বন বিভাগ কিংবা প্রশাসন তৎপর থাকে না। যখন প্যারাবন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়, তখন তারা তৎপরতা দেখায়। কিন্তু তখন আর কিছু করার থাকে না।
মহেশখালীর বেলার পরিবেশ সম্পাদক বলেন, সোনাদিয়ায় ৪০টির বেশি খননযন্ত্র দিয়ে কয়েক হাজার একর প্যারাবন ধ্বংস করে চিংড়িঘের নির্মাণ করা হয়েছে। প্রশাসন সবকিছু দেখেও চুপ থাকে।
কারা দায়ী?
গণশুনানিতে অভিযোগ উঠেছে, রাজনৈতিক ক্ষমতাশালীদের ছত্রছায়ায় প্যারাবন ধ্বংস করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি-জামায়াতের নেতারা মিলেমিশে প্যারাবন ধ্বংসে যুক্ত থাকলেও, তাদের আইনের আওতায় আনা হয় না।
জলবায়ুবিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্যারাবন ধ্বংস হচ্ছে রাজনৈতিক ক্ষমতাশালীদের কারণে। কিন্তু দখলদার প্রভাবশালীদের নামের তালিকা দেখা যায় না।
প্রশাসনের বক্তব্য:
উপকূলীয় বন বিভাগ চট্টগ্রাম অঞ্চলের ডিএফও জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১ লাখ ৯৫ হাজার একর প্যারাবনের মধ্যে ৩০ হাজার একর অবৈধ দখলে চলে গেছে। এর মধ্যে সোনাদিয়া ও চকরিয়া এলাকার ১০ হাজার একর রয়েছে।
জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, সোনাদিয়ার প্যারাবনের দখলদারের তালিকা তৈরি হয়েছে এবং দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। তবে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না থাকায় সোনাদিয়ার অবৈধ চিংড়িঘের উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না।
করণীয়:
- অবিলম্বে সোনাদিয়ার অবৈধ চিংড়িঘের উচ্ছেদ করতে হবে।
- প্যারাবন ধ্বংসের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
- উপকূলীয় বন রক্ষায় প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ করতে হবে।
- প্যারাবন রক্ষায় স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
- সোনাদিয়াকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে বিশেষ সংরক্ষণ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সোনাদিয়ার কান্না যেন পুরো উপকূলের কান্না। আসুন, সবাই মিলে সোনাদিয়াকে বাঁচাই, উপকূলকে বাঁচাই। আপনার মতামত কমেন্ট করে জানান।