প্রকৃতির ভারসাম্য আজ হুমকির মুখে। কক্সবাজারের চকরিয়ায় সংরক্ষিত বন উজাড়ের ঘটনা তারই এক জ্বলন্ত উদাহরণ। সম্প্রতি, আদালত এই বন উজাড়ের অভিযোগ তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন। ইজারার নামে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ধ্বংসের অভিযোগের ভিত্তিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা পরিবেশ সুরক্ষার গুরুত্ব এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে আমাদের আরও সচেতন করে তোলে। চকরিয়ার অরণ্য বিপর্যয়
আজ বুধবার সকালে, চকরিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ারুল কবির স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেন। তিনি বন উজাড়ের অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনা করে পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেন।
চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
আদালতে কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে জানান, কক্সবাজার পিবিআইয়ের পুলিশ সুপারকে আগামী ১৬ই জুলাইয়ের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। আদালত তদন্ত চলাকালীন প্রয়োজনে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারেরও অনুমতি দিয়েছেন।
এই ঘটনার সূত্রপাত হয় প্রথম আলোর অনলাইনে ২০শে মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে। “কক্সবাজারের চকরিয়ায় ইজারা নিয়ে সংরক্ষিত বন উজাড়” শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, চকরিয়া উপজেলার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের খুটাখালী বাজার সংলগ্ন খুটাখালী খাল থেকে বালু উত্তোলনের ফলে সংরক্ষিত গর্জন বনের গাছগুলোর গোড়া থেকে মাটি সরে যাচ্ছে, যা বনটিকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। চকরিয়ার অরণ্য বিপর্যয়
প্রতিবেদনে খুটাখালী ইউনিয়নের হরিখোলা গ্রামের বাসিন্দা কামাল হোসেনের বক্তব্য তুলে ধরা হয়। তিনি অভিযোগ করেন, ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ আলী লিটন এবং সাইফুলসহ প্রায় ৫০ জনের একটি সিন্ডিকেট এই বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত। কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, “খালে এখন আর বালু নেই। তারা মূলত ইজারা নিয়ে বনের মাটি ও বালু তুলছে। এ কারণে বনভূমি ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।”
আদালত সূত্রে জানা যায়
মামলার আদেশে বন উজাড়ের ঘটনায় জড়িত সকল অভিযুক্তদের, অপরাধের সহযোগী এবং প্ররোচনাদাতাদের চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। অপরাধটি কোথায়, কবে এবং কখন সংঘটিত হয়েছে, সেই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া, এই অপরাধের পেছনে কারা জড়িত, তাদের পরিচয়ও উদঘাটন করতে বলা হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তাকে সাক্ষীদের জবানবন্দি, সংগৃহীত প্রমাণ এবং ডিজিটাল সাক্ষ্যপ্রমাণসহ একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সংরক্ষিত বন উজাড়: কারণ ও প্রভাব
চকরিয়ার এই ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। বন উজাড় একটি বৈশ্বিক সমস্যা, যা আমাদের পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। নির্বিচারে গাছ কাটা, অবৈধ দখল, এবং অপরিকল্পিত উন্নয়ন – এগুলো বন উজাড়ের প্রধান কারণ।
- জলবায়ু পরিবর্তন: বনভূমি কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে পরিবেশকে ঠান্ডা রাখে। গাছপালা কমে গেলে বাতাসে কার্বনের পরিমাণ বাড়ে, যা গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয় এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি করে।
- ভূমিধস ও বন্যা: গাছের শিকড় মাটি ধরে রাখে, যা ভূমিধস প্রতিরোধ করে। বন উজাড় হওয়ার ফলে মাটি আলগা হয়ে যায় এবং সামান্য বৃষ্টিতেই ভূমিধসের সম্ভাবনা বাড়ে। এছাড়া, বনভূমি বন্যার পানি আটকে রাখে, যা উজাড় হয়ে গেলে বন্যার প্রকোপ বাড়ে।
- জীববৈচিত্র্য হ্রাস: বনভূমি বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল। বন উজাড় হওয়ার ফলে অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যায়, যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে।
- জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব: স্থানীয় জনগোষ্ঠী যারা বনের উপর নির্ভরশীল, তারা বন উজাড়ের কারণে তাদের জীবিকা হারায় এবং দারিদ্র্যের শিকার হয়।
আমাদের করণীয়
চকরিয়ার ঘটনা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, পরিবেশ রক্ষায় আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। আসুন, আমরা সবাই মিলে পরিবেশ সুরক্ষায় এগিয়ে আসি:
- গাছ লাগান: বেশি করে গাছ লাগানোর মাধ্যমে আমরা বনভূমি পুনরুদ্ধার করতে পারি।
- বন রক্ষা করুন: বন উজাড়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন এবং অবৈধ কার্যকলাপের প্রতিবাদ করুন।
- সচেতনতা বাড়ান: পরিবেশ সুরক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে অন্যদের সচেতন করুন।
- টেকসই জীবনযাপন: পরিবেশ-বান্ধব পণ্য ব্যবহার করুন এবং অপচয় কমান।
পরিবেশ আমাদের জীবনধারণের ভিত্তি। এই ভিত্তিকে রক্ষা করতে না পারলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যেতে পারব না।
আপনার মতামত জানান
চকরিয়ার বন উজাড়ের ঘটনা নিয়ে আপনার কী মতামত? আপনি পরিবেশ রক্ষায় কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে চান? নিচে কমেন্ট করে আমাদের জানান। আপনার প্রতিটি মতামত আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণে সাহায্য করবে। পরিবেশ সুরক্ষায় আপনার সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
আরও জানতে ভিজিট করুন
যদি আপনি পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে আরও জানতে চান, তাহলে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন এবং আমাদের নিউজলেটারে সাবস্ক্রাইব করুন। একসাথে কাজ করার মাধ্যমেই আমরা একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে পারি।