30.2 C
Bangladesh
শুক্রবার, জুন ১৩, ২০২৫
spot_img

চেরাপুঞ্জির বৃষ্টি সুনামগঞ্জের শঙ্কা: ফের বন্যার মুখোমুখি কি আমাদের দেশ?

সুনামগঞ্জের আকাশে আবারও দুর্যোগের ঘনঘটা। গত কয়েক দিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে জেলার নদ-নদীর জলস্তর ক্রমশ বাড়ছে। জেলা শহরের কাছে সুরমা নদীর পানি এখনও বিপদসীমার নিচে থাকলেও গত ২৪ ঘণ্টায় তা ৯০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়ে সুনামগঞ্জে ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সুনামগঞ্জে আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, নদীর পানিও বাড়ছে – এই খবর স্থানীয়দের মধ্যে নতুন করে বন্যার আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এই পরিস্থিতি আবারও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশের উপর এর বিরূপ প্রভাবকে স্পষ্ট করে তুলছে। চেরাপুঞ্জির বৃষ্টি সুনামগঞ্জের শঙ্কা

বৃষ্টি আর ঢলের খেলা: ক্রমশ বাড়ছে উদ্বেগ

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, গত দুদিনের ভারী বৃষ্টিতে জেলার নদী ও হাওরে পানি বাড়ছে। যদিও হাওরে এখনও জলস্তর বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছায়নি, তবে লাগাতার বৃষ্টিপাত সেই সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছে না। পাউবো আরও জানিয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টা সুনামগঞ্জে একই রকম ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। উদ্বেগের বিষয় হলো, সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ৪১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ জল দ্রুত ভাটির দিকে নেমে এলে সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে স্বল্প মেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। চেরাপুঞ্জির বৃষ্টি, সুনামগঞ্জের শঙ্কা

পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন

করে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর এলাকায় সুরমা নদীর জলমাপক স্টেশনে নজর রাখা হচ্ছে। আজ শনিবার দুপুর ১২টায় এখানে সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ৬ দশমিক ৭৮ মিটার, যা বিপদসীমার ১ দশমিক ২ মিটার নিচে। তবে গতকাল একই সময়ে এই উচ্চতা ছিল ৫ দশমিক ৮৮ মিটার। অর্থাৎ, গত ২৪ ঘণ্টায় সুরমার জলস্তর ৯০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্ষা মৌসুমে এখানে সুরমা নদীর বিপদসীমা ধরা হয় ৮ দশমিক ৮০ মিটার।

শুধু সুরমা নয়, ভারী বৃষ্টি ও উজানের

ঢলে জেলার তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত নদ যাদুকাটাতেও প্রবল স্রোত দেখা যাচ্ছে। এখানেও জলস্তর উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এছাড়াও সুনামগঞ্জের পাটনাই, কুশিয়ারা, নলজুর, চেলা, চলতি, রক্তি, বৌলাই, খাসিয়ামারাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানিও ক্রমশ বাড়ছে। মূলত, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে অতিবৃষ্টি হলেই এর সরাসরি প্রভাব পড়ে ভাটিতে থাকা সুনামগঞ্জে, যার ফলে পাহাড়ি ঢল নেমে এসে বন্যার সৃষ্টি হয়।

তাহিরপুর উপজেলার লাউরেড়গড় এলাকার বাসিন্দা সাইদুর রহমান জানান, শনিবার সকাল থেকে পাহাড়ি ঢলের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে উপজেলার হাওরগুলো ইতিমধ্যেই ঢলের পানিতে ভরে যেতে শুরু করেছে। এভাবে ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে খুব শীঘ্রই বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

তবে, পাউবোর সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার শনিবার দুপুরে আশ্বস্ত করে বলেন, “একইভাবে বৃষ্টি আরও দুদিন হতে পারে। ঢলের পানি নেমে হাওরে যাচ্ছে। এই বৃষ্টি সুনামগঞ্জের জন্য অনেকটা স্বাভাবিক। আমরা মনে করছি না সুনামগঞ্জে এতে বন্যা হবে।” তার এই আশ্বাসের বাণী সত্ত্বেও, উজানের বৃষ্টির পরিমাণ এবং নদ-নদীর জলস্তরের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা স্থানীয়দের মধ্যে চাপা উদ্বেগ জিইয়ে রেখেছে। চেরাপুঞ্জির বৃষ্টি, সুনামগঞ্জের শঙ্কা

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রচ্ছায়া: বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ

সুনামগঞ্জে ঘন ঘন ভারী বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলের এই প্রবণতা জলবায়ু পরিবর্তনের এক সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। বিশ্বব্যাপী উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে বৃষ্টিপাতের ধরনে পরিবর্তন আসছে। কোথাও অতিবৃষ্টি হচ্ছে, আবার কোথাও দীর্ঘ খরা দেখা যাচ্ছে। সুনামগঞ্জের ভৌগোলিক অবস্থান এবং উজানের পার্বত্য অঞ্চলের কারণে ভারী বৃষ্টিপাতের প্রভাব এখানে সহজেই অনুভূত হয়। পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা এবং অপরিকল্পিত উন্নয়নও এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের তীব্রতা বাড়াতে সাহায্য করে।

বর্ষার শুরুতেই সুনামগঞ্জে আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, নদীর পানিও বাড়ছে – এই সংবাদ একদিকে যেমন প্রাকৃতিক নিয়মের অংশ, তেমনই অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট অনিশ্চয়তারও প্রতিফলন। স্থানীয়দের জীবন ও জীবিকা মূলত কৃষির উপর নির্ভরশীল, আর বন্যা তাদের জন্য এক বড় হুমকি। প্রতি বছর বন্যার কারণে ফসল নষ্ট হয়, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়।

সতর্কতা ও প্রস্তুতি: দুর্যোগ মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ

যদিও পাউবো এখনই বন্যার আশঙ্কা করছে না, তবুও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস এবং নদীর জলস্তরের বৃদ্ধিকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। স্থানীয় প্রশাসন এবং জনগণের উচিত আগাম সতর্কতা অবলম্বন করা।

  1. নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উপর নজর রাখা জরুরি:
    1. আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা।
    2. নদী ও হাওরের জলস্তরের গতিবিধি লক্ষ্য রাখা।
    3. জরুরি অবস্থার জন্য শুকনো খাবার, পানীয় জল ও প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র মজুত রাখা।
    4. আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর অবস্থান জেনে রাখা এবং প্রয়োজনে সেখানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকা।
    5. স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং তাদের নির্দেশাবলী মেনে চলা।

শেষ কথা:

সুনামগঞ্জের বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের আবারও মনে করিয়ে দেয় যে, জলবায়ু পরিবর্তন একটি বাস্তব এবং এর প্রভাব আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ভারী বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলের মতো ঘটনাগুলি এখন প্রায় নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব এবং দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি আরও বেশি জরুরি। কেবল সরকারি পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়, ব্যক্তিগত এবং সামাজিক সচেতনতাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

আপনার এলাকায় কি এমন কোনো দুর্যোগের পূর্বাভাস রয়েছে? সুনামগঞ্জে আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, নদীর পানিও বাড়ছে – এই খবরের পরিপ্রেক্ষিতে আপনার মতামত কী? বন্যা মোকাবিলায় আপনার কোনো বিশেষ প্রস্তুতি বা পরামর্শ থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানান। আসুন, সকলে মিলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা করি এবং একটি সুরক্ষিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ