দেশজুড়ে যখন ঈদুল আযহা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে, তখন টানা বা থেমে থেমে বৃষ্টি জনজীবনে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আট বিভাগেই একই অবস্থা বিরাজ করছে। ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরা, কেনাকাটা এবং কোরবানির পশু কেনার মতো গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গগুলো এই বৃষ্টির কারণে ব্যাহত হচ্ছে। সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা হলো, ঈদের দিনের আবহাওয়া কেমন থাকবে—জামাত এবং পশু কোরবানির সময় বৃষ্টি বিঘ্ন ঘটাবে কিনা। মেঘ-বৃষ্টির লুকোচুরি
আবহাওয়ার বর্তমান পরিস্থিতি ও পূর্বাভাস
গত ২৭ মে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি লঘুচাপের প্রভাবেই সারা দেশে এই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। যদিও এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয়নি, তবে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করেছে। আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, আগামী কয়েক দিনে বাংলাদেশে নতুন করে ঘূর্ণিঝড় বা লঘুচাপ সৃষ্টির কোনো আভাস নেই। মেঘ-বৃষ্টির লুকোচুরি
তবে, দেশব্যাপী মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় আগামী কয়েক দিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থেমে থেমে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঢাকাসহ সিলেট, বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রামের কিছু কিছু জায়গায় এক-দুই পশলা বৃষ্টি হতে পারে। যদিও ২ জুনের (আজ) দিকে বৃষ্টিপাত কিছুটা কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু তা সম্পূর্ণভাবে থামবে না। এই সপ্তাহজুড়েই সারা দেশে হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। তুলনামূলকভাবে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা কম থাকতে পারে।
ঈদের দিনের আবহাওয়া এবং ভ্যাপসা গরম
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ঈদের দিন সারা দেশেই বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, আরও সুনির্দিষ্ট পূর্বাভাস পেতে তিন দিন আগে বলা সম্ভব হবে। বৃষ্টির পাশাপাশি এই পুরো সময়টাজুড়েই ভ্যাপসা গরম অনুভূত হবে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য থাকবে, যা গরমের অনুভূতি বাড়িয়ে দেবে। মূলত, বাতাসে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি বেশি থাকলে উষ্ণতা অনুভূত হয়। আগামী ২ জুনের পর গরম কিছুটা বাড়বে এবং ৭ জুনের পর তাপমাত্রা ৩২ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে যে, এই সপ্তাহের শেষের দিকে সারা দেশেই তাপমাত্রা বাড়তে পারে। আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো বা হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। মেঘ-বৃষ্টির লুকোচুরি
জলবায়ু পরিবর্তন এবং আবহাওয়ার অনিশ্চয়তা
সাম্প্রতিক এই আবহাওয়ার ধরন জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের এক সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। অনিয়মিত এবং চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো এখন প্রায়শই দেখা যাচ্ছে। অসময়ে ভারী বৃষ্টিপাত, ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথের পরিবর্তন এবং তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার অস্বাভাবিক ওঠানামা—এসবই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ ফল। পূর্বে যে আবহাওয়ার পূর্বাভাসগুলো অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল ছিল, এখন তা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে, যা জনজীবনে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।
এই আবহাওয়ার অনিশ্চয়তা কেবল ঈদের উৎসবকেই প্রভাবিত করছে না, বরং কৃষিক্ষেত্রে, যোগাযোগ ব্যবস্থায় এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ছে। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার ক্ষেত্রেও এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
পরিবেশ সচেতনতা এবং করণীয়
এই পরিবর্তনশীল আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে চলতে এবং এর বিরূপ প্রভাব কমাতে পরিবেশ সচেতনতা অপরিহার্য। আমাদের সকলকে ব্যক্তিগত এবং সমষ্টিগত পর্যায়ে পরিবেশ সুরক্ষায় ভূমিকা পালন করতে হবে:
- জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হওয়া: নিয়মিত আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুসরণ করা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেওয়া।
- কার্বন নিঃসরণ কমানো: বিদ্যুৎ ও জ্বালানির অপচয় রোধ করা, ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে গণপরিবহনে উৎসাহিত হওয়া।
- বৃক্ষরোপণ: বেশি করে গাছ লাগানো এবং বনভূমি রক্ষা করা, যা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ।
- বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ কমানো।
- পানির অপচয় রোধ: পানির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা।
শেষ কথা
ঈদের দিন বৃষ্টি হোক বা না হোক, আবহাওয়ার এই অনিশ্চয়তা আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতাকেই তুলে ধরেছে। এই সংকট মোকাবেলায় আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ একান্ত জরুরি। আসুন, আমরা সকলে সচেতন হই এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ ও নিরাপদ পৃথিবী নিশ্চিত করি।
ঈদের ছুটিতে আপনার এলাকার আবহাওয়া কেমন থাকবে বলে মনে করছেন? এই আবহাওয়া কি আপনার ঈদ পরিকল্পনায় কোনো প্রভাব ফেলছে? আপনার মতামত কমেন্ট করে জানান।