27 C
Bangladesh
শনিবার, আগস্ট ৩০, ২০২৫
spot_img

৪ নদীর বিপদসীমা অতিক্রম: দেশের ৬ জেলা ঝুঁকিতে

টানা ভারী বর্ষণের ফলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং চট্টগ্রামের নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই এবং চট্টগ্রামের হালদা নদীর পানি সাতটি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উত্তরের তিস্তা নদীর পানিও সতর্ক সীমায় রয়েছে এবং খুব শীঘ্রই বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতি দেশের অন্তত ছয়টি জেলা—সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ফেনীর নদীতীরবর্তী এলাকায় বন্যার ঝুঁকি তৈরি করেছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের এক অশনি সংকেত। ৪ নদীর বিপদসীমা অতিক্রম

উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি: বাড়ছে নদীর জলস্তর

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই এবং হালদা নদীর পানি বিপদসীমার উপরেই থাকতে পারে। সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সারিগোয়াইন, যাদুকাটা ও সোমেশ্বরী নদীর পানিও আগামী তিন দিন পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। এই অঞ্চলের নদ-নদীর অস্বাভাবিক জলবৃদ্ধি স্থানীয় জনজীবনে চরম দুর্ভোগ ডেকে এনেছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার ফলে বহু মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন। ৪ নদীর বিপদসীমা অতিক্রম

চট্টগ্রামেও একই চিত্র: বাড়ছে উপকূলীয় নদীর পানি

চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী, মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানিও আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে এবং মাতামুহুরী নদী সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে। ফেনী জেলার মুহুরী নদীর সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। তবে, বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র আশার বাণী শুনিয়েছে যে আগামী তিন দিনের মধ্যে এই নদীগুলোর পানি কমতে শুরু করতে পারে।

তিস্তার জল বাড়ছে: রংপুর বিভাগেও বন্যার আশঙ্কা

রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানিও আগামী তিন দিন পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তিস্তা নদী ইতিমধ্যেই সতর্ক সীমায় পৌঁছেছে এবং ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে এটি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এর ফলে রংপুর বিভাগের নদী তীরবর্তী এলাকাতেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ৪ নদীর বিপদসীমা অতিক্রম

উপকূলীয় অঞ্চলে জোয়ারের প্রভাব: বাড়তি সতর্কতার প্রয়োজন

আগামীকাল পর্যন্ত বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদীগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতায় জোয়ার হতে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। সাগরে গভীর নিম্নচাপের কারণে গত কয়েকদিন ধরে দেশব্যাপী ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে গেলেও মৌসুমী বায়ুর সক্রিয়তার কারণে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে উপকূলীয় অঞ্চলের নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে বেশি উচ্চতার জোয়ার পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস: বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা অব্যাহত

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামীকাল সোমবার ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক স্থানে বৃষ্টি হতে পারে। মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে আগামী কয়েক দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এই পরিস্থিতিতে নদ-নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পাওয়ার এবং বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশের উপর প্রভাব

টানা ভারী বৃষ্টিপাত এবং নদ-নদীর অস্বাভাবিক জলবৃদ্ধি জলবায়ু পরিবর্তনের একটি সুস্পষ্ট লক্ষণ। পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে আবহাওয়ার ধরনে যে পরিবর্তন এসেছে, তারই ফলশ্রুতিতে আমরা ঘন ঘন এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছি। একদিকে যেমন অতিবৃষ্টি ও বন্যার প্রকোপ বাড়ছে, তেমনি অন্যদিকে দেখা যাচ্ছে খরা ও অনাবৃষ্টি। এই ধরনের চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলি আমাদের কৃষি, অর্থনীতি এবং জনজীবনের উপর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

আমাদের করণীয়

এই পরিস্থিতিতে আমাদের সকলকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে এবং পরিবেশ সুরক্ষায় নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলা করার জন্য ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত উভয় পর্যায়েই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এর মধ্যে অন্যতম হলো:

  1. পানি সাশ্রয় করা: বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা এবং পানির অপচয় রোধ করা।
  2. গাছ লাগানো: বেশি করে গাছ লাগানো এবং বনভূমি রক্ষা করা, যা ভূমিক্ষয় রোধ করবে এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখবে।
  3. প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো: পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য নদী-নালায় ফেলা বন্ধ করা।
  4. জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো: নবায়নযোগ্য ऊर्जा ব্যবহারের দিকে ঝুঁকতে হবে।
  5. সচেতনতা বৃদ্ধি: জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সুরক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে অন্যদের সচেতন করা।
শেষ কথা

চার নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করা এবং আরও নদীর পানি বৃদ্ধির পূর্বাভাস আমাদের জন্য একটি গভীর উদ্বেগের বিষয়। এই পরিস্থিতি জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। এখনই সময় সম্মিলিতভাবে পরিবেশ রক্ষার জন্য এগিয়ে আসা এবং টেকসই উন্নয়নের পথে হাঁটা। তা না হলে, এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের জীবন ও জীবিকার উপর আরও বড় হুমকি নিয়ে আসবে।

এই বন্যা পরিস্থিতি ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে আপনার মতামত কী? কমেন্ট করে আমাদের জানান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ