রাজশাহীতে এখন করোনার নতুন ঢেউ দেখা যাচ্ছে, যা বেশ চিন্তার কারণ। সম্প্রতি ১৫ জনের করোনা পরীক্ষা করে ৯ জনেরই পজিটিভ এসেছে। এর মানে, প্রতি ১০০ জনে ৬০ জনেরই করোনা ধরা পড়ছে! আক্রান্তদের বেশিরভাগই ডাক্তার। যদিও তাদের জ্বর, সর্দি, কাশির মতো হালকা উপসর্গ দেখা যাচ্ছে, কিন্তু শরীর বেশ দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং সুস্থ হতে দেরি হচ্ছে। রাজশাহীতে করোনার নীরব বিস্তার
কী ঘটছে রাজশাহীতে?
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক খন্দকার মো. ফয়সল আলম জানিয়েছেন, গত কয়েকদিন ধরেই এমন পজিটিভ ফল আসছে। তিনি বলেন, “খুবই হালকা জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে তাঁরা আসছেন। এটা বোঝা যাবে না যে করোনা। তবে তাঁদের শরীর দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। ভালো হতে একটু সময় লাগছে।” আক্রান্তদের মধ্যে ৭ জনই নাকি চিকিৎসক। মজার ব্যাপার হলো, এই পরীক্ষাগুলো চালাচ্ছেন মাইক্রোবায়োলজির শিক্ষকেরাই। রাজশাহীতে করোনার নীরব বিস্তার
অধ্যাপক আলম আরও বলেন, যেহেতু আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে না, তাই বিষয়টিকে ততটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু এটা ঠিক নয়। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তি এবং ডায়াবেটিসের মতো জটিল রোগে ভোগা মানুষদের জন্য এটি গুরুতর সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই সবার সতর্ক হওয়া দরকার।
বর্তমানে আক্রান্তদের সঠিক সংখ্যা রাখা হচ্ছে না। তবে অধ্যক্ষের পরামর্শ, ৬০ বছরের বেশি বয়সী যাদের জ্বর বা অন্য কোনো উপসর্গ আছে, তাদের অবশ্যই করোনা পরীক্ষা করানো উচিত। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে গিয়ে মাস্ক পরে নমুনা দেওয়া যাবে। পরীক্ষার খরচ মাত্র ১০০ টাকা এবং দুপুরের মধ্যেই রিপোর্ট পাওয়া যায়।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কে বিশ্বাস জানিয়েছেন, তাদের ল্যাবেই করোনা পরীক্ষা করা হয়। তিনি স্বীকার করেছেন যে, অনেকে পজিটিভ হলেও শরীরে তেমন সমস্যা না থাকায় হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন না। তবে বর্তমানে একজন করোনা রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন এবং তার চিকিৎসা চলছে।
শুধু করোনা নয়, পরিবেশও বড় চিন্তার কারণ
এই করোনা পরিস্থিতি শুধু একটি স্বাস্থ্য সমস্যা নয়, এর সাথে পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনেরও সম্পর্ক আছে। কারণ, সুস্থ পরিবেশ না থাকলে আমাদের শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যা হচ্ছে, তা আমাদের জন্য আরও বিপদ ডেকে আনছে:
- নতুন নতুন রোগের জন্ম: উষ্ণতা বাড়ার কারণে মশা ও অন্যান্য পোকামাকড় এখন এমন জায়গায়ও ছড়িয়ে পড়ছে, যেখানে আগে ছিল না। ফলে মশা-বাহিত রোগ বেড়ে যেতে পারে।
- দূষিত বাতাস ও শ্বাসকষ্ট: পরিবেশ দূষণের কারণে বাতাসের মান খারাপ হচ্ছে। এই দূষিত বাতাস আমাদের শ্বাসযন্ত্রকে দুর্বল করে দেয়, ফলে করোনা বা অন্য যেকোনো শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে এবং সমস্যা আরও গুরুতর হয়।
- প্রাণী থেকে মানুষের রোগ: বনভূমি ধ্বংস হওয়ায় প্রাণী আর মানুষের কাছাকাছি আসার সুযোগ বাড়ছে। এতে প্রাণীদের রোগ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়, যেমনটা করোনার ক্ষেত্রে ধারণা করা হয়।
- খাদ্য ও পানির অভাব: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে এবং পানির সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এতে পুষ্টিহীনতা বাড়ে, যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়।
রাজশাহীর মতো যে অঞ্চলগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার, সেখানে এই বিষয়গুলো আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। যদিও এই করোনা বৃদ্ধির সাথে সরাসরি কোনো পরিবেশগত ঘটনার যোগসূত্র মেলেনি, তবে পরিবেশের দুর্বলতা এবং জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে, যা যেকোনো স্বাস্থ্য সংকটের সময় বিপদ বাড়াতে পারে। রাজশাহীতে করোনার নীরব বিস্তার
কী করবেন আপনি?
রাজশাহীর এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, করোনা এখনও পুরোপুরি চলে যায়নি। এমনকি হালকা উপসর্গ থাকলেও সতর্ক থাকতে হবে, বিশেষ করে দুর্বল মানুষদের জন্য।
- খবর রাখুন: সরকারি স্বাস্থ্য নির্দেশনাগুলো মেনে চলুন।
- পরীক্ষা করান: যদি করোনার উপসর্গ থাকে, বিশেষ করে যদি আপনার বয়স বেশি হয় বা অন্য কোনো রোগ থাকে, তাহলে পরীক্ষা করান।
- সাবধান থাকুন: ভিড়ের জায়গায় মাস্ক পরুন, হাত পরিষ্কার রাখুন এবং দূরত্ব বজায় চলুন।
- পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসুন: গাছ লাগানো, দূষণ কমানো এবং পরিবেশ রক্ষার কাজে অংশ নিন। মনে রাখবেন, সুস্থ পরিবেশই আমাদের সুস্থ থাকার চাবিকাঠি।
- সচেতনতা ছড়ান: সঠিক তথ্য জেনে তা অন্যদের সাথেও শেয়ার করুন।
রাজশাহীর এই নীরব করোনা বৃদ্ধি আমাদের জন্য একটি বড় শিক্ষা। এটি শুধু করোনা নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশের সাথে আমাদের স্বাস্থ্যের গভীর সম্পর্ককেও তুলে ধরে। এই চ্যালেঞ্জগুলো বুঝলে আমরা আরও সুস্থ ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়তে পারব।
আপনার কি মনে হয়, পরিবেশ ভালো থাকলে এমন রোগ বিস্তার কমানো সম্ভব?