যারা পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন, তাদের জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাস একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কিছুটা কম থাকলেও, আবহাওয়া অধিদপ্তর জানাচ্ছে যে আগামী বুধবার থেকে দেশে আবারও বৃষ্টির প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। এই পরিবর্তনের কারণ এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। বুধবার থেকে বাড়ছে বৃষ্টি
আপাতত বৃষ্টির বিরতি, তবে শীঘ্রই আসছে পরিবর্তন
দেশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর সক্রিয়তা কিছুটা কমে যাওয়ায় রবিবার বৃষ্টিপাত তুলনামূলকভাবে কম ছিল। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে খবর, আগামীকাল সোমবার এবং মঙ্গলবারও এই পরিস্থিতি বজায় থাকতে পারে এবং বৃষ্টির প্রবণতা কম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই বিরতি দীর্ঘস্থায়ী হবে না। বুধবার থেকে বাড়ছে বৃষ্টি
আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানিয়েছেন, “মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা কমে যাওয়ায় দেশে বৃষ্টি অনেকটাই কমে গেছে। তবে আগামী ২৫ বা ২৬ জুন আকাশের ওপরের স্তরে একটি ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হতে পারে, যা নিচে নেমে লঘুচাপে পরিণত হওয়ার আশঙ্কাও আছে। এমনটি হলে আবার বৃষ্টিপাত বাড়বে।” তিনি আরও জানান যে জুন মাসের শেষ অথবা জুলাই মাসের শুরু থেকে বৃষ্টিপাতের এই বাড়ন্ত ভাব আবার কমতে শুরু করতে পারে।
পূর্বাভাস: কোথায় কেমন বৃষ্টি হতে পারে?
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, সোমবার রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
পাশাপাশি, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি (২৩-৪৩ মিলিমিটার) থেকে ভারি (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। বুধবার থেকে বাড়ছে বৃষ্টি
আবহাওয়াবিদদের পূর্বাভাস আরও বলছে যে, বুধবার থেকে দেশব্যাপী বৃষ্টিপাতের তীব্রতা এবং বিস্তৃতি উভয়ই বৃদ্ধি পাবে। তবে এই পরিস্থিতি খুব বেশি দিন স্থায়ী নাও হতে পারে, কারণ জুনের শেষ সপ্তাহ নাগাদ অথবা জুলাই মাসের শুরুতে বৃষ্টির প্রবণতা পুনরায় হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কেন এই পরিবর্তন? জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
বৃষ্টিপাতের এই আকস্মিক বৃদ্ধি এবং হ্রাসের ঘটনা জলবায়ু পরিবর্তনের একটি অংশ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং বায়ুমণ্ডলের অস্বাভাবিক আচরণের কারণে বৃষ্টিপাতের ধরণেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনিয়মিত বৃষ্টি, অতিবৃষ্টি বা দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টি – এগুলো সবই জলবায়ু পরিবর্তনের লক্ষণ।
আমাদের দেশের পরিবেশের ওপর এই পরিবর্তনশীল বৃষ্টিপাতের একটি বড় প্রভাব পড়তে পারে। একদিকে যেমন অতিবৃষ্টির কারণে বন্যা বা ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়ে, তেমনই দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হলে খরা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, যা কৃষি এবং জনজীবনের জন্য ক্ষতিকর।
রবিবারের চিত্র: কোথায় কতটা বৃষ্টিপাত?
রবিবার দেশের ৫১টি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের মধ্যে ৩২টিতে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই দিন সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায়, যা ছিল ১৩৫ মিলিমিটার। এছাড়াও চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে ৬৭ মিলিমিটার, সীতাকুণ্ডে ৬০ মিলিমিটার এবং খুলনার কয়রায় ৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এই তথ্যগুলো আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের বর্তমান চিত্রটি বুঝতে সাহায্য করে।
সচেতনতাই আগামী দিনের পথ
বৃষ্টির এই আগমনী বার্তা একদিকে যেমন কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে, তেমনই অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আমাদের পরিবেশের জন্য উদ্বেগের কারণও হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রেক্ষাপটে আমাদের সকলেরই উচিত পানি নিষ্কাশনের সঠিক ব্যবস্থা রাখা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য প্রস্তুত থাকা।
আসুন, আমরা সবাই মিলে আমাদের পরিবেশের প্রতি আরও বেশি যত্নশীল হই এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় সচেতন থাকি। আপনার এলাকার আবহাওয়ার পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার কোনো বিশেষ অভিজ্ঞতা থাকলে বা এই বিষয়ে আপনার কোনো মতামত থাকলে, নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এই পোস্টটি শেয়ার করে অন্যদেরকেও এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অবগত করুন।