26.5 C
Bangladesh
বুধবার, জুলাই ১৬, ২০২৫
spot_img

রাজনৈতিক প্রভাবে ধ্বংস হচ্ছে হালদা: মাছের ডিম ও জীববৈচিত্র্য বিপন্ন

বাংলাদেশের পরিবেশজলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যারা সচেতন, তাদের জন্য একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক খবর। চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদী এখন মারাত্মক হুমকির মুখে। নির্বিচারে বালু উত্তোলন এই ঐতিহ্যবাহী নদীর প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে। ধ্বংস হচ্ছে হালদা

অবৈধ বালু উত্তোলনের ভয়াবহ চিত্র

হালদা নদী, যা বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের এক অমূল্য উৎস, সেখান থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার ও পাওয়ার পাম্প বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এর ফলে শুধু মৎস্য প্রজননই নয়, নদীর সামগ্রিক জীববৈচিত্র্যও হুমকির সম্মুখীন।

স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করলেও বালু উত্তোলনকারীরা এর তোয়াক্কা করছে না। এক স্থানে অভিযান চালালে তারা দ্রুত স্থান পরিবর্তন করে অন্য জায়গায় তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এতে হালদা নদীর বিভিন্ন অংশে প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলন চলছে, যা হালদা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ধ্বংস হচ্ছে হালদা

রাজনৈতিক প্রভাব এবং সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য

জানা গেছে, ফটিকছড়ি উপজেলার অন্তত ১০টি স্থানে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বালু খেকোরা হালদা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো হলো: নারায়ণহাট ভূমি অফিস সংলগ্ন কুলাল পাড়া, মির্জারহাটের অদূরে ভাঙ্গাপুল, হাঁপানিয়া, ভূজপুর রাবার ড্যাম, সুয়াবিল মালাকার পাড়া এবং সমিতিরহাট ইউনিয়নের আরবানিয়া সাওদাগর ব্রিজ এলাকা। এই সব এলাকায় একাধিক সিন্ডিকেট অবাধে বালু উত্তোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নারায়ণহাট ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ নেতা টিপু মেম্বার এবং মির্জারহাটে যুবদল নেতা বেলাল এই বালু উত্তোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যদিও অভিযুক্তরা তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং এটিকে মিথ্যা বলে দাবি করেছেন। ধ্বংস হচ্ছে হালদা

পরিবেশগত প্রভাব: মা মাছ ও জীববৈচিত্র্যের সংকট

হালদা থেকে নির্বিচারে বালু উত্তোলনের ফলে মা মাছের প্রজনন ক্ষেত্র মারাত্মকভাবে বিনষ্ট হচ্ছে। হালদা নদী বিশ্বের একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী, যেখানে রুই জাতীয় মাছ ডিম ছাড়ে। নদীর তলদেশের পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ায় মা মাছের ডিম ছাড়ার প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে মৎস্য উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

শুধু তাই নয়, এই অবৈধ বালু উত্তোলন নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষাকেও কঠিন করে তুলেছে। নদীর বাস্তুতন্ত্র বিঘ্নিত হওয়ায় অনেক জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের অস্তিত্বও হুমকির মুখে পড়েছে। এটি কেবল স্থানীয় পরিবেশের জন্যই নয়, সামগ্রিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটেও একটি অশনি সংকেত, কারণ নদী এবং এর জীববৈচিত্র্য প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রশাসনের পদক্ষেপ ও চ্যালেঞ্জ

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, হালদা নদী থেকে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তিনি আরও বলেন, “বালু উত্তোলনের খবর পেলেই আমরা অভিযান পরিচালনা করি।” তবে, বালু উত্তোলনকারীদের দ্রুত স্থান পরিবর্তন এবং স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে কার্যক্রম পরিচালনার কারণে প্রশাসনের পক্ষে এই অবৈধ কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আমাদের করণীয়: পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা

হালদা নদীর মতো প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করা আমাদের সবার সম্মিলিত দায়িত্ব। এই নদীর সুরক্ষা কেবল মৎস্য প্রজনন রক্ষা নয়, বরং আমাদের দেশের পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও অপরিহার্য। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ যেমন জরুরি, তেমনি জনসচেতনতা বৃদ্ধিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আপনারা যারা পরিবেশজলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আগ্রহী, তাদের কাছে এই খবরটি পৌঁছে দেওয়া জরুরি। আসুন, আমরা সবাই মিলে হালদা নদী রক্ষায় সোচ্চার হই এবং অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য প্রশাসনকে সহায়তা করি।

এই বিষয়ে আপনার কী মতামত? হালদা নদী রক্ষায় আর কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন? নিচে কমেন্ট করে আপনার মূল্যবান ভাবনা জানান এবং এই পোস্টটি শেয়ার করে অন্যদের সচেতন করতে সাহায্য করুন!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ