26.5 C
Bangladesh
বৃহস্পতিবার, জুলাই ১৭, ২০২৫
spot_img

ভারত পানি ছাড়ার মাত্র ২ ঘণ্টা আগে জানায়!

ভাবুন তো, আপনার মোবাইলে একটা মেসেজ এলো: “২ ঘণ্টার মধ্যে আপনার এলাকা ডুবে যাবে, দয়া করে নিরাপদ আশ্রয়ে যান।” আপনি কী করবেন? ২ ঘণ্টায় জিনিসপত্র গোছাবেন, নাকি পরিবারের সবাইকে নিয়ে দৌড় দেবেন? এই সামান্য সময়ে কি আদৌ কোনো প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব? ভারত পানি ছাড়ার

শুনতে সিনেমার দৃশ্যের মতো মনে হলেও, এটাই বাংলাদেশের বন্যার প্রস্তুতির কঠিন বাস্তবতা। সম্প্রতি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ঠিক এই উদ্বেগজনক চিত্রটিই তুলে ধরেছেন। তাঁর মতে, উজানের দেশ ভারত যখন বাঁধ খুলে দেওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে আমাদের জানায়, তখন বন্যার মতো ভয়াবহ দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এটি শুধু একটি তথ্য ঘাটতির বিষয় নয়, এটি আমাদের পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার লড়াইকে আরও জটিল করে তুলেছে। ভারত পানি ছাড়ার

“রিয়েল-টাইম ডেটা”– সোনার হরিণ?

বিষয়টা অনেকটা এমন যে, ঝড়ের গতিপথ জেনেও আপনি বলতে পারছেন না সেটি ঠিক কখন, কোথায়, কতটুকু শক্তি নিয়ে আঘাত হানবে। রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, আমাদের কাছে উজানের দেশ থেকে আসা পানির ‘রিয়েল-টাইম ডেটা’ বা তাৎক্ষণিক তথ্য নেই। ভারত যখন জানায় যে তারা “ভারী” বর্ষণের কারণে পানি ছাড়ছে, তখন সেই “ভারী” মানে ঠিক কতটুকু পানি, তার কোনো সঠিক ধারণা আমরা পাই না।

তিনি বলেন, “উজানের দেশ যদি আমাদের দুই ঘণ্টা আগে বলে যে ‘আমি গেট খুলে দেব’; ২ ঘণ্টায় তো আর আপনি কোনো প্রস্তুতি নিতে পারেন না।” ভারত পানি ছাড়ার

এই দুই ঘণ্টার নোটিশ পাওয়ার পর সেই পানি বা ঢল আমাদের সীমান্ত পেরিয়ে লোকালয়ে পৌঁছাতে প্রায় ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা সময় নেয়। এখন ভাবুন, এই তথ্য যদি মাঝরাতে আসে? তখন স্থানীয় প্রশাসন বা সাধারণ মানুষ ছোটাছুটি করারও সুযোগ পাবে না। এই তথ্যগত দুর্বলতা আমাদের বন্যা ব্যবস্থাপনাকে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়েই পঙ্গু করে দিচ্ছে। তবে আশার কথা হলো, এই সংকট কাটাতে যুক্তরাজ্যের সাথে একটি সমঝোতার চেষ্টা চলছে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ হয়তো সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে ‘সাইট-স্পেসিফিক’ বা নির্দিষ্ট এলাকার তাৎক্ষণিক তথ্য পেতে পারে।

শুধু অবকাঠামো দিয়ে কি বন্যা ঠেকানো সম্ভব?

আমাদের মধ্যে একটি সাধারণ ধারণা প্রচলিত আছে যে, বড় বড় বাঁধ, উঁচু রাস্তা আর কংক্রিটের কাঠামো বানালেই বুঝি বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচা সম্ভব। কিন্তু সাম্প্রতিক ফেনীর বন্যা এই ধারণাকে বড় একটি প্রশ্নচিহ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। রিজওয়ানা হাসানের মতে, শুধুমাত্র অবকাঠামোগত সমাধান দিয়ে পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত দুর্যোগ মোকাবেলা করা সম্ভব নয়।

তিনি প্রশ্ন তুলেছেন:

  1. কতটা শক্তিশালী অবকাঠামো বানালে একদিনে ৫৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত সামলানো সম্ভব?
  2. কত উঁচু বাঁধ নির্মাণ করলে ২১ ফুট পানির উচ্চতাকে ঠেকানো যাবে?

বাস্তবতা হলো, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ার আচরণ দিন দিন চরম এবং অপ্রত্যাশিত হয়ে উঠছে। আজ যে অবকাঠামোকে আমরা যথেষ্ট শক্তিশালী ভাবছি, আগামীকালের কোনো মহাদুর্যোগে তা খড়কুটোর মতো ভেসে যেতে পারে। তাই আমাদের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় শুধু কংক্রিটের পেছনে অর্থ ব্যয় করাটা কতটা যৌক্তিক, তা ভাবার সময় এসেছে।

তাহলে সমাধান কী? “প্রাক-প্রস্তুতি”

যদি অবকাঠামো চূড়ান্ত সমাধান না হয়, তাহলে আমাদের করণীয় কী? রিজওয়ানা হাসানের মতে, এর উত্তর হলো ‘প্রাক-প্রস্তুতি’। অর্থাৎ, দুর্যোগ আসার পর ছোটাছুটি না করে, দুর্যোগ আসার আগেই নিজেদের প্রস্তুত রাখা।

এই প্রাক-প্রস্তুতি শুধু বন্যা বা বৃষ্টির পূর্বাভাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর জন্য আরও কিছু বিষয় জরুরি:

১. ঝুঁকিভিত্তিক তথ্য: কোন এলাকায় নদীর ভাঙনের ঝুঁকি বেশি, কোথায় আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা রয়েছে—এই তথ্যগুলো আগে থেকেই সংগ্রহ করতে হবে।

২. ভবিষ্যতের পূর্বাভাস: নির্দিষ্ট এলাকায় আগামী দিনে কী ধরনের দুর্যোগ হতে পারে, তার একটি সম্ভাব্য চিত্র তৈরি করতে হবে।

৩. পরিকল্পিত উন্নয়ন: উপরের তথ্যগুলোর ওপর ভিত্তি করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে জনবসতি এবং অবকাঠামো নির্মাণে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করতে হবে।

সহজ কথায়, যেখানে বিপদ ঘটার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি, সেখানে আগে থেকেই সুরক্ষা বলয় তৈরি করতে হবে। এই সুরক্ষা বলয় শুধু অবকাঠামোগত নয়, বরং তথ্যভিত্তিক এবং নীতিগত। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং দুর্যোগ পূর্বাভাসের আঞ্চলিক সহযোগী সংস্থা (রাইমস) সম্প্রতি যে নতুন ওয়েবসাইট এবং ডিসিশন সাপোর্ট সিস্টেম (ডিএসএস) চালু করেছে, তা এই প্রাক-প্রস্তুতির দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

শেষ কথা

উজানের পানি ছাড়ার তথ্য পেতে দেরি হওয়াটা অবশ্যই একটি বড় কূটনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এর পাশাপাশি আমাদের নিজেদের প্রস্তুতির দিকেও তাকাতে হবে। পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এখন আর কোনো তাত্ত্বিক আলোচনার বিষয় নয়, এটি আমাদের প্রতিদিনের বাস্তবতা। এই বাস্তবতার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হলে আমাদের গতানুগতিক চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তাৎক্ষণিক তথ্যের আদান-प्रदान, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং দূরদর্শী নীতি—এই তিনের সমন্বয়েই হয়তো আমরা বন্যার মতো দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতিকে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারব।

আপনার মতামত কী? পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের এই জটিল চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় সঠিক তথ্য এবং কৌশলগত পরামর্শ অপরিহার্য। আপনার প্রতিষ্ঠান বা অঞ্চলের জন্য টেকসই সমাধান খুঁজে পেতে এবং এ বিষয়ে আরও জানতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আসুন, একসাথে একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ