পলিথিন: বাংলাদেশের পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ
বাংলাদেশে পলিথিন নিষিদ্ধ হলেও এর ব্যবহার কমছে না। সারা দেশের হাটবাজারে অবাধে চলছে পলিথিনের উৎপাদন ও বিক্রি, যা দেশের পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পলিথিনের দূষণে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণসমূহের মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠেছে। পরিবেশের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বাংলাদেশে পলিথিন দূষণ
পলিথিনের ব্যাপক ব্যবহার এবং দূষণের মাত্রা
বাংলাদেশে প্রতিদিন কোটি কোটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া হয়, যার একটি বড় অংশ সরাসরি নদীতে গিয়ে জমা হয়। দেশের প্রধান শহরগুলোর নদীগুলোর তলদেশে পলিথিনের পুরু স্তর জমে রয়েছে, যার কারণে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং জীববৈচিত্র্যের ওপর বিপর্যয় নেমে আসছে। ঢাকার বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, কর্ণফুলী, বরিশালের কীর্তনখোলা এবং চট্টগ্রামের হালদা নদীর তলদেশে পলিথিনের স্তর জমে থাকা এর একটি উদাহরণ।
পরিবেশ ও কৃষিজমির জন্য ক্ষতিকর প্রভাব
পলিথিন মাটিতে পচে না, ফলে কৃষিজমির উর্বরতা কমে যায় এবং ফসল উৎপাদনে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। নিষিদ্ধ হওয়ার পরও, হাটবাজারে মাছ, মাংস, শাকসবজি, মিষ্টিসহ প্রতিটি পণ্যে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহৃত হচ্ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে মাটি ও জলবায়ুর দূষণ আরো বাড়বে।
পলিথিন নিষিদ্ধের বাস্তবায়ন কেন ব্যর্থ?
২০০২ সালে বাংলাদেশে পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হলেও, কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে এর ব্যবহার বন্ধ হয়নি। এক প্রতিবেদনে জানা যায়, সারা দেশে অবৈধ পলিথিন উৎপাদনের কারখানা রয়েছে ৩ হাজারের বেশি, যেখান থেকে প্রতিদিন ১ কোটি ৪০ লাখের মতো পলিথিন ব্যাগ উৎপাদিত হচ্ছে। সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী হওয়ায় পলিথিনের ব্যবহার বেড়েই চলেছে।
পলিথিন দূষণ কমাতে কী করতে হবে?
- কঠোর নজরদারি ও আইন প্রয়োগ:
পলিথিন দূষণ কমাতে সরকারকে কঠোর নজরদারি এবং আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর এবং প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন।
- বিকল্প ব্যাগের সহজলভ্যতা:
পলিথিনের বিকল্প হিসেবে কাগজ, পাট ও চটের ব্যাগের সহজলভ্যতা বাড়াতে হবে। এগুলো সাশ্রয়ী ও টেকসই হওয়ায় পলিথিনের চাহিদা কমবে।
- সচেতনতা বৃদ্ধি:
জনসাধারণকে সচেতন করা প্রয়োজন, যাতে তারা পলিথিনের ব্যবহার কমায় এবং পরিবেশবান্ধব বিকল্প ব্যবহার করে।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পলিথিন দূষণ রোধ গুরুত্বপূর্ণ
জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ দূষণের কারণসমূহের মধ্যে পলিথিন দূষণ অন্যতম। সঠিক পরিকল্পনা ও সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য পলিথিনের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করা প্রয়োজন। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের মতো পরিবেশবিদদের উদ্যোগ আমাদেরকে এই লড়াইয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
সমন্বিত তৎপরতার প্রয়োজন
পরিবেশ দূষণ রোধে স্থানীয় প্রশাসন, এনজিও এবং সাধারণ জনগণকে একসাথে কাজ করতে হবে। কঠোর নজরদারি, আইন প্রয়োগ এবং বিকল্পের সহজলভ্যতার মাধ্যমে পলিথিনের ব্যবহার কমিয়ে আনা সম্ভব। প্রয়োজনে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করে কাগজ ও চটের ব্যাগ তৈরিতে বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার।
শেষ কথা
পলিথিন দূষণ আমাদের পরিবেশ এবং জলবায়ুর জন্য বড় হুমকি। এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং বিকল্প পণ্য সহজলভ্য করতে হবে। আসুন সবাই মিলে পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হই এবং পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে এগিয়ে আসি। বাংলাদেশে পলিথিন দূষণ
পলিথিন মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আপনার কী করণীয় মনে হয়? মতামত দিন এবং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এই পোস্টটি শেয়ার করুন!