বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকোপ দিন দিন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ২০২৪ সালে প্রথমবারের মতো ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে, যা প্যারিস চুক্তির নির্ধারিত সীমার বিপজ্জনক সীমানায় প্রবেশের ইঙ্গিত দেয়। এই উষ্ণায়ন প্রবণতা যদি চলতে থাকে, তাহলে আগামী এক দশকের মধ্যেই আমরা বৈশ্বিক জলবায়ু সংকটের এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করব। জলবায়ু পরিবর্তনের ভবিষ্যৎ
প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য ও বর্তমান অবস্থা
২০১৬ সালে স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তির মূল লক্ষ্য ছিল ২১ শতকের মধ্যে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা ও পরিসংখ্যান ইঙ্গিত দেয় যে এই লক্ষ্য অর্জন করা ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ভবিষ্যৎ
দুটি নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে যে, ২০২৪ সালে গড় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে দীর্ঘমেয়াদী উষ্ণতা এই মাত্রা অতিক্রম করতে পারে ২০২৯ সালের মধ্যেই। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই যদি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়, তবে ভবিষ্যতে এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদী উষ্ণায়নের পূর্বাভাস
একটি গবেষণায় অতীতের উষ্ণতা বৃদ্ধির ধারা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন যে একবার কোনো নির্দিষ্ট উষ্ণতার সীমা অতিক্রম হলে, পরবর্তী ২০ বছরের মধ্যে সেই সীমা দীর্ঘমেয়াদে বজায় থাকে। এর অর্থ হলো, ২০২৪ সালের ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা যদি বাস্তব প্রতিফলন হয়, তাহলে আমরা ইতোমধ্যে এক দীর্ঘমেয়াদী উষ্ণায়ন প্রবণতার মধ্যে প্রবেশ করেছি।
অন্যদিকে, আরেকটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, ২০২৪ সালে টানা ১২ মাসের জন্য গড় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। গবেষকদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, যদি এই প্রবণতা বজায় থাকে, তাহলে ২০২৯ সালের মধ্যেই আমরা স্থায়ীভাবে প্যারিস চুক্তির সীমা লঙ্ঘন করব।
কার্বন নিঃসরণ ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার
পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের অন্যতম প্রধান উপায় হলো গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমানো। প্যারিস চুক্তির আওতায় প্রতিটি দেশ তাদের নির্দিষ্ট কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের পরিকল্পনা দিয়েছে, যাকে বলে “ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন” (NDC)। তবে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৯৫টি স্বাক্ষরকারী দেশের মধ্যে মাত্র ১৩টি দেশ তাদের নতুন নিঃসরণ হ্রাস পরিকল্পনা জমা দিয়েছে।
বিশ্বের বৃহত্তম কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর মধ্যে চীন, ভারত, রাশিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনো তাদের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেনি। এটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ক্ষেত্রে এক বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ও করণীয়
বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে কিছু জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার:
- নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি: সৌর ও বায়ু বিদ্যুতের মতো বিকল্প শক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
- শিল্প ও পরিবহনে কার্বন নির্গমন হ্রাস: উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে কার্বন নিঃসরণ কমানো সম্ভব।
- গাছ লাগানো ও বন সংরক্ষণ: কার্বন শোষণের জন্য বনাঞ্চল সংরক্ষণ ও বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম বাড়ানো দরকার।
- সচেতনতা বৃদ্ধি: সাধারণ মানুষকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে আরও সচেতন করা দরকার।
উপসংহার
পৃথিবীর উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণের সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। বর্তমান প্রবণতা যদি বজায় থাকে, তবে প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য পূরণ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। এখনই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একত্রিত হয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, নাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।
আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না! আপনি কী মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আমাদের কী করা উচিত? কমেন্টে আপনার মতামত জানান!