বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের চাপ বাড়ছে, এবং বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতও তার ব্যতিক্রম নয়। সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, এসির তাপমাত্রা নিয়ে সরকার যে নির্দেশনা দিয়েছে তা অনুসরণ না করলে, নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় অতিরিক্ত লোডশেডিং হতে পারে। এই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিদ্যুৎ সাশ্রয় এবং দেশব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা। অতিরিক্ত লোডশেডিং
বিদ্যুৎ ব্যবহারের চাহিদা এবং এসির ভূমিকা
বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি-বেসরকারি অফিস, এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে এসির ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গরমকাল আসলে এসির চাহিদা বেড়ে যায়, এবং এই চাহিদা মোকাবিলার জন্য বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক চাপ পড়ে। দেশীয় বিদ্যুৎ চাহিদা শীতকালে ৯-১০ হাজার মেগাওয়াট, তবে গরমকালে এই চাহিদা ১৭-১৮ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছায়। এই অতিরিক্ত চাহিদার মধ্যে অন্যতম কারণ এসির ব্যবহার।
এসি ব্যবহারে বিদ্যুৎ খরচ একটি বড় দৃষ্টি আকর্ষণকারী বিষয়। বিশেষত গরমে এসির তাপমাত্রা যদি ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি থাকে, তাহলে প্রায় ৫-৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয়। এজন্য, এসির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সাশ্রয় সম্ভব এবং এই সাশ্রয় করা বিদ্যুৎ থেকে অতিরিক্ত চাহিদা অনেকটা কাটিয়ে ওঠা যাবে।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সরকারের উদ্যোগ
মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান উল্লেখ করেছেন যে, দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহের চাহিদা শীত ও গরমকালের মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে দুটি কারণে—একটি সেচের জন্য অতিরিক্ত বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয় এবং অপরটি হচ্ছে এসি ব্যবহার। সেচের জন্য প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়, যা দেশের কৃষি ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সেচের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, তবে এসির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারের কিপটে করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ব্যবস্থাপনার জন্য, সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশেষত সরকারিভাবে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো, ব্যাংক এবং সচিবালয়গুলোকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে যেন তারা এসির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে, আশা করা হচ্ছে বিদ্যুৎ ব্যবহারের উপর চাপ কমানো যাবে, যা দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহে কিছুটা সহায়তা করবে। অতিরিক্ত লোডশেডিং
এসির তাপমাত্রার নির্দেশনা কার্যকর করতে হবে
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ব্যবস্থাপনা কার্যকর করতে, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে ফিডার ব্যবস্থাপনা চালু করা হবে। যদি কোনো এলাকা এসির তাপমাত্রা নির্দেশনার বাইরে চলে যায়, সেখানে অতিরিক্ত লোডশেডিং দেওয়া হবে। এটি মূলত বিদ্যুৎ ব্যবহারের চাপ কমানোর জন্য একটি কার্যকর পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে সরকার সাশ্রয়ী ব্যবহারের লক্ষ্যে কাজ করতে পারে এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে জনগণের সহযোগিতা আশা করা হচ্ছে।
এছাড়া, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, সরকার এখনো বিদ্যুৎ খাতে ৪২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদান করছে। সরকারের এই ভর্তুকি কাটিয়ে উঠতে, বিদ্যুৎ কেনার দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। এটি দেশের বিদ্যুৎ খাতকে আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে এবং গ্রাহকদের জন্য সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ ব্যবহারের সম্ভাবনা বাড়াবে।
স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা
এছাড়া, জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনারসহ স্থানীয় প্রশাসনকে এই বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষদের অনুরোধ জানানো হয়েছে যেন তারা জনগণকে এসির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করেন। শুধুমাত্র সরকারি নয়, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ জনগণের সহযোগিতাও এই উদ্যোগের সফলতা নির্ধারণ করবে।
সরকারিভাবে সোলার পাওয়ার প্ল্যান্টের সম্প্রসারণ
বিদ্যুৎ খাতে সরকারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হচ্ছে সোলার পাওয়ার প্ল্যান্টের সম্প্রসারণ। সম্প্রতি সিরাজগঞ্জে ৬৮ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্ল্যান্টের অগ্রগতি পরিদর্শন করে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন যে, সোলার শক্তি উৎপাদনে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। সোলার শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে, তা দেশের বিদ্যুৎ চাহিদার বড় একটি অংশ মেটাতে সক্ষম হবে।
শেষ কথা
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সাশ্রয়, বিশেষত এসির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলি বিদ্যুৎ ব্যবহারের উপর চাপ কমাতে সহায়ক হবে এবং দেশব্যাপী বিদ্যুৎ সরবরাহে সুষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। এই উদ্যোগের সফলতা নির্ভর করছে জনগণের সচেতনতা এবং সহযোগিতার উপর। আমরা যদি সবাই একসাথে কাজ করি, তবে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের মাধ্যমে দেশের পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব।