বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় এক অনন্য ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, যা শুধু স্থানীয় মানুষের জন্য নয়, দেশের পরিবেশ ও জলবায়ুর জন্যও চরম বিপদের সংকেত। সিলেটের ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে এলাকা, যেখানে একসময় পাথর উত্তোলন চলতো নিয়ন্ত্রিতভাবে, আজ তা যেন একটি দুর্দশার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন সেখানে পাথর উত্তোলন চলছে একেবারে প্রকাশ্যে। স্থানীয় প্রশাসন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর চেষ্টা সত্ত্বেও এই অবৈধ লুটপাট ঠেকানো যাচ্ছে না। কিন্তু এই লুটপাট শুধুমাত্র পরিবেশকে বিপদের মধ্যে ফেলে না, বরং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করছে। ভোলাগঞ্জে পাথর লুট
এক নির্মম বাস্তবতা: অবাধ পাথর লুট
ভোলাগঞ্জের রোপওয়ে এলাকা আজ পাথর উত্তোলনের এক বিশাল বাণিজ্যিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার শ্রমিক, পুরুষ ও নারী, বেলচা, কোদাল, শাবল নিয়ে মাটি খুঁড়ে পাথর তুলছেন এবং সেগুলো নদী পাড়ে স্তূপ করে রাখছেন। কিছু পাথর সংগ্রহ করে বারকি নৌকায় নিয়ে আসছেন এবং বিক্রি করছেন। কিন্তু সবচাইতে দুঃখজনক বিষয় হলো, এটি এখন পুরোপুরি প্রকাশ্যে ঘটছে, যা আগে কখনও হয়নি। এলাকাটির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বাহিনী, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি), সীমিত ক্ষমতায় কাজ করছে। তাদের প্রচেষ্টা থাকলেও, অবাধ পাথর উত্তোলন বন্ধ করা যাচ্ছে না।
প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা: কি কারণে থামছে না পাথর লুট?
প্রশাসনিক পর্যায়ে যখনই এই পাথর উত্তোলনের ব্যাপারে আলোচনা হয়, তখন সবার মুখে একটাই কথা শোনা যায় – ”আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।” তবে বাস্তবতা হচ্ছে, প্রশাসন আসলেই এ বিষয়টিকে পুরোপুরি গুরুত্ব দিচ্ছে না। সিলেটের জেলা প্রশাসক জানাচ্ছেন যে প্রশাসন নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে, কিন্তু ”ভ্রাম্যমাণ আদালত” চালিয়ে পাথর লুট বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। আর কেননা, অভিযানের পর সেগুলো আবার পুনরায় শুরু হয়ে যাচ্ছে। তবে, এ ধরনের স্থায়ী পদক্ষেপের অভাবই আসল সমস্যা। ভোলাগঞ্জে পাথর লুট
পরিবেশগত বিপদ: পাথর উত্তোলনের অগণিত ক্ষতি
এই পাথর উত্তোলন শুধুমাত্র স্থানীয় জনগণের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য নয়, বরং পুরো পরিবেশের জন্য এক বিশাল ধ্বংসযজ্ঞের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাথর উত্তোলনের ফলে তৈরি হওয়া গভীর গর্তগুলো নদী পাড়ে বিপদজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। একদিকে, গর্তগুলো জল ধারণ করে নদীর জলস্তর পরিবর্তন করছে, অন্যদিকে এসব গভীর গর্ত ভূমি স্খলনের কারণ হতে পারে। শুধু তাই নয়, এই পাথর উত্তোলন এলাকায় বাস করা বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী, বিশেষ করে সরীসৃপ ও ছোট প্রাণীর বাসস্থান ধ্বংস করছে। নদী এবং এর আশেপাশের পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
এছাড়া, এই পাথর উত্তোলন এলাকা স্থানীয় কৃষকদের জন্যও বিপদজনক। কারণ নদীর জলস্তর পরিবর্তন এবং ভূমি স্খলনের ফলে তাঁদের কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা তাদের জীবিকার জন্য মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। এটি শুধু একটি পরিবেশগত সমস্যা নয়, এটি মানবিক সঙ্কটের সৃষ্টি করতে পারে, যেখানে একদিকে অর্থনৈতিক ক্ষতি, অন্যদিকে সামাজিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
স্থানীয় মানুষের দুঃখ: লাভ হলেও ক্ষতি বেশি
অনেক শ্রমিক পাথর উত্তোলন করে দৈনিক তিন থেকে চার হাজার টাকা আয় করছেন, যা অনেকের জন্য বড় একটি অর্থনৈতিক সুযোগ। তবে, এ সুযোগটিকে দেখা উচিত শুধু এক অর্থনৈতিক লাভ হিসেবে নয়, বরং এর পিছনে যে সামাজিক এবং পরিবেশগত ক্ষতি লুকিয়ে আছে, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। শ্রমিকদের পাথর উত্তোলন করতে বাধ্য করছে ওই জায়গায় চলমান অর্থনৈতিক চাহিদা এবং জীবনযাত্রার চাহিদা।
তবে, এই অর্থনৈতিক লাভ দীর্ঘস্থায়ী হবে না, কারণ প্রাকৃতিক সম্পদ ক্ষতি হয়ে গেলে তা কখনই পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। এসব শ্রমিক হয়তো আজ কিছুটা উপকৃত হচ্ছেন, কিন্তু আগামী দিনে, পরিবেশগত ক্ষতির কারণে তাঁদেরই জীবন আরও কঠিন হয়ে যাবে। যদি এই অবাধ পাথর উত্তোলন অব্যাহত থাকে, তাহলে এলাকাটি একসময় পাথরশূন্য হয়ে পড়বে, যার ফলে শ্রমিকদের কাজ এবং আয় উভয়ই সংকটে পড়বে।
সমাধানের দিকে একটি পদক্ষেপ: প্রশাসনিক জবাবদিহি
এখন সময় এসেছে প্রশাসনকে আরও দায়িত্বশীলভাবে এবং দ্রুত পদক্ষেপ নিতে। তারা যদি নিজেদের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে পারে এবং পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তবে হয়তো কিছুটা হলেও পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে পারে। প্রথমত, পাথর উত্তোলনের নিয়মিত অভিযান চালানো প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে হবে, যাতে লুটপাট ঠেকানো সম্ভব হয়। আর তৃতীয়ত, স্থানীয় জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তাঁদের পরিবেশ রক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
আমাদের সবার দায়িত্ব
এটি শুধু প্রশাসনের বা স্থানীয় মানুষের সমস্যা নয়; এটি আমাদের সকলের সমস্যা। পরিবেশ, জলবায়ু এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর আমাদের অগণিত নির্ভরতা রয়েছে। সুতরাং, যখন কেউ পাথর উত্তোলন করছে এবং পরিবেশকে ধ্বংস করছে, তখন সেটি আমাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় সংকেত। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে, যাতে পরবর্তী প্রজন্ম একটি নিরাপদ এবং সুস্থ পরিবেশে বাস করতে পারে।
দেখুন পাথর লুট আজকের কথা নয় আমরা দেখছি দীর্ঘদিন থেকে এই শিলশিলা চলে আসছে এটা এতোদিন দলীয় লোকেরা ভক্ষণ করেছে এখনো কেউ না কেউ এর পিছনে আছে ।তবে ডিসি মহোদয় এটাকে প্রতিরোধ করতে পারেন।