পোড়া আবর্জনা: যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে দূষণকারী বিদ্যুৎ উৎপাদন পদ্ধতি
ইউকেতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সবচেয়ে দূষণকারী পদ্ধতি এখন আবর্জনা পোড়ানো, এমনটাই জানাচ্ছে বিবিসির বিশ্লেষণ। দেশটির ঘরোয়া আবর্জনার প্রায় অর্ধেক এখন বড় ইনসিনারেটরে (পোড়ানো প্লান্ট) পুড়িয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা হচ্ছে, যা বিজ্ঞানীরা জলবায়ুর জন্য ‘বিপর্যয়’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। নতুন ইনসিনারেটর নির্মাণ বন্ধেরও দাবি উঠেছে। পোড়া আবর্জনা
ইনসিনারেটরে আবর্জনা পোড়ানো: কীভাবে সবচেয়ে দূষণকারী হয়ে উঠল?
প্রায় ১৫ বছর আগে, সরকার ল্যান্ডফিলে (পৃথিবীতে মাটির নিচে) আবর্জনা ফেলে এর গ্যাস থেকে তৈরি হওয়া দূষণ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। তখন, তারা ল্যান্ডফিলে আবর্জনা ফেলানোর উপর কর বৃদ্ধি করে, যাতে কাউন্সিলগুলো বিকল্প পথ খোঁজে। সেই সময় থেকে, ইনসিনারেটর সংখ্যা বেড়ে গেছে। গত পাঁচ বছরে ইংল্যান্ডে ইনসিনারেটরের সংখ্যা ৩৮ থেকে বেড়ে ৫২ হয়েছে।
আবর্জনা পোড়ানো বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি উপায় হলেও, এর ফলে যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়, তা কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সমান। উল্লেখ্য, গত মাসেই যুক্তরাজ্য তার শেষ কয়লা প্লান্ট বন্ধ করেছে।
প্লাস্টিক পোড়ানোর বিপর্যয়
খাদ্য আবর্জনা পোড়ানোর সময় তুলনামূলক কম ক্ষতিকারক গ্যাস নির্গত হয়, তবে প্লাস্টিক পোড়ানোর সময় বিষয়টি পুরোপুরি বিপরীত। প্লাস্টিক মূলত ফসিল ফুয়েল থেকে তৈরি, এবং এটি পোড়ানোর সময় উচ্চ মাত্রার গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপন্ন হয়। ফলে প্লাস্টিক পোড়ানো ল্যান্ডফিলে মাটির নিচে ফেলার চেয়ে ১৭৫ গুণ বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি করে।
গত কয়েক বছরে, আরও বেশি প্লাস্টিক ইনসিনারেটরে যাচ্ছে এবং কম খাবারের আবর্জনা। এদিকে, সরকার তাদের নিজের অনুমান অনুযায়ী ২০১৭ সালের মতোই একই পরিমাণ মিশ্র আবর্জনা পোড়ানো হয় বলে ধরে নিচ্ছে, যা সমস্যার প্রকৃত মাত্রা কমিয়ে দেখাতে পারে।
ইনসিনারেটর এবং সরকারের দ্বিধা
যদিও কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, তবুও আবর্জনা পোড়ানোর মাধ্যমে তৈরি বিদ্যুৎ যুক্তরাজ্যে এখন সবচেয়ে বেশি দূষণকারী শক্তির উৎস। বিবিসির বিশ্লেষণ বলছে, আবর্জনা পোড়ানো বিদ্যুৎ উৎপাদন এখন গড়ের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি দূষণকারী। তবে, এখনও ইংল্যান্ডে নতুন ইনসিনারেটর তৈরি হচ্ছে। গত মাসেই ডরসেটে নতুন একটি £১৫০ মিলিয়ন ইনসিনারেটর অনুমোদন পেয়েছে।
যুক্তরাজ্যের জলবায়ু পরিবর্তন কমিটি সতর্ক করে বলেছে, ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দূষণে ইনসিনারেটরের অবদান বাড়বে, যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয়। অনেক বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদরা বলছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে নির্গমন কমানোর লক্ষ্যে আরও নতুন ইনসিনারেটর না বানানোর প্রয়োজন।
স্থানীয় প্রশাসনের চ্যালেঞ্জ: দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির ফাঁদ
কিছু স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আবর্জনা পোড়ানো থেকে দূরে সরে যেতে চাইলেও, দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির কারণে তারা তা পারছে না। বিবিসির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, স্থানীয় কাউন্সিলগুলোর কাছে অন্তত £৩০ বিলিয়নের চুক্তি আছে ইনসিনারেটর ব্যবহারের জন্য, যা কিছু ক্ষেত্রে ২০ বছরেরও বেশি সময়ের জন্য প্রযোজ্য। এ ধরনের চুক্তির ফলে তারা পুনর্ব্যবহারের মতো আরো পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারছে না।
কাউন্সিলগুলোকে ইনসিনারেটরে নির্দিষ্ট পরিমাণ আবর্জনা পাঠানোর বাধ্যবাধকতা থাকে। এটি ভঙ্গ করলে তারা আর্থিক জরিমানার মুখোমুখি হতে পারে। এর ফলে, তারা আবর্জনা পুনর্ব্যবহারের জন্য উদ্যোগ নেওয়ার সাহস পায় না।
আবর্জনা পোড়ানোর জন্য কোনো নীতি পরিবর্তন হবে কি?
সম্প্রতি একটি সাময়িক নিষেধাজ্ঞা চালু করা হয়েছিল নতুন ইনসিনারেটরের অনুমোদনে, কিন্তু তা ল্যাপস করার পর পুনরায় চালু করা হয়নি। বিভিন্ন বিভাগের মধ্যকার সমন্বয়ের অভাবও সরকারের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। নতুন নীতির অভাবে, বিদ্যমান প্লান্টগুলো আরও বড় ও দূষণকারী হচ্ছে এবং নতুন প্লান্ট তৈরি হওয়া অব্যাহত রয়েছে।
উপসংহার: আমাদের কী করতে হবে?
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাজ্য বড় লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু আবর্জনা পোড়ানো বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে এটি অর্জন করা সম্ভব নয়। প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে হলে আবর্জনা পুনর্ব্যবহার, কম্পোস্টিং এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করার প্রয়োজন।
আমরা আশা করি সরকার এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নেবে। জলবায়ু পরিবর্তনের আরও কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানুন, আমাদের পোস্ট সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপনার মতামত জানান!